ত্রাণবাহী আরও ১৪ ট্রাক প্রবেশ করেছে গাজায়
গাজা উপত্যকায় টানা ১৬ দিন ধরে বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এই হামলায় এখন পর্যন্ত চার হাজার ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, দ্বিতীয় দফায় ত্রাণবাহী ১৪টি ট্রাকের একটি বহর গাজায় প্রবেশ করেছে। তিনি এই পদক্ষেপকে ওই এলাকায় বসবাসরতদের জন্য ছোট্ট একটি আশার আলো বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করার পর জানিয়েছেন যে, তারা দুজনই ফিলিস্তিনিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহ চলমান থাকার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
তবে অক্সফামের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান ম্যাগনাস করফিক্সেন বিবিসিকে বলেন, প্রতিদিন কয়েকটি ট্রাককে ঢুকতে দেওয়াটা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। একই সঙ্গে গাজায় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনি। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতামার বেন-গিভির বলেন, হামাস যদি তাদের হাতে আটক সব জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি না হয়, তাহলে ওই এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ চলমান রাখার কোনো গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না।
হামাসের সঙ্গে সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির নেতারা ইসরায়েলের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলারও আহ্বান জানিয়েছেন। ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা আগামী সপ্তাহে ইসরায়েল সফর করবেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা লেবাননে হেজবুল্লাহর দুটি দলকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে। তারা ইসরায়েলের ভেতরে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং রকেট ছোড়ার পরিকল্পনা করছিল বলে দাবি করা হয়েছে। অপরদিকে গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে শত শত মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে। গত কয়েক ঘণ্টায় গাজার বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কাছেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু কোনো হতাহতের বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।
ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফা ছাড়াও আল-কুদস এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। হামাস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে আল-কুদস হাসপাতালের কাছে বিস্ফোরণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছে, এটা ইসরায়েলি বিমান হামলা। তারা একটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ছবি প্রকাশ করে দাবি করেছে, সেটি কুয়েতি হাসপাতালের পেছনের ভবন। তবে এই মুহূর্তে এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। অপরদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চার হাজার ৬৫১ জন নিহত হয়েছে। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৮৭৩ জন শিশু, এক হাজার ১০১ জন নারী এবং এক হাজার ৬৭৭ জন পুরুষ রয়েছে। হতাহতের মোট সংখ্যার মধ্যে ৮৩৯ জন গাজার দক্ষিণাঞ্চলে নিহত হয়েছে। এই অঞ্চলেই গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষদের আশ্রয় নিতে বলেছিল ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংঘাতে আরো ১৪ হাজার ২৪৫ জন আহত হয়েছে।