কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে এখন শুধুই পূজার আমেজ। এরই মধ্যে সব প্যান্ডেলে প্রতিমা পৌঁছে গেছে। পূজা মন্ডপগুলো দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই সময় কলকাতার পূজা দেখার জন্য দেশ-বিদেশে থেকে পর্যটক আসে এই ত্রিলোত্তমায়। আর ত্রিলোত্তমার পূজা মানে বিভিন্ন ধরনের শিল্পভাবনা। আর এই শিল্প কলায় ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশি শিল্পিরাও যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশি শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় কলকাতার দুর্গাপূজা আরও আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন অনেক উদ্যোক্তরা। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজাকে সম্প্রতি ইউনেস্কোর ইনট্যানিজবল কালচারাল হেরিটেজের তকমা পেয়েছে। ফলে নানা শিল্পভাবনায় ফুটে উঠেছে সমগ্ৰ পশ্চিমবঙ্গের পূজা মন্ডপগুলো। শুধু পশ্চিমবঙ্গের শিল্পিদের ভাবনায় নয় ওপারবাংলার (বাংলাদেশ) শিল্পীদের ভাবনায় নতুন রুপ পেয়েছে এবারের কলকাতার দুর্গাপূজা।
এই প্রথম কলকাতার বেহালার ‘নূতন সংঘ’ বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পি নিয়ে এসেছে। তাদের ভাবনার থিম ‘চতুরঙ্গের সংকল্প’ বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পীর নিপুনতায় তৈরি হয়েছে পূজামন্ডপ। বাংলাদেশের তরুণ শিল্পী শেখ হিমেল জানিয়েছেন, আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনে এত প্রতিযোগিতা, এত দৌড়ঝাপ সেটাকেই আমরা ফুটিয়ে তুলেছি। যেটা চতুরঙ্গ অর্থাৎ দাবার মোটিভ নিয়ে কাজ করেছে। তিনি আরও বলেন, এখানে বেশি করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশের রিক্সা পেন্টিং। যে হস্তশিল্প আগে অ্যামাচার শিল্পিরা রং নিজ হাতে তুলি দিয়ে করতো।সেই ডিজাইনটা এখানে তুলে ধরে হয়েছে। শেখ হিমেল বলেন, স্পেনের শিল্পি সালভেদর ডালির একটি তরল ঘড়ির আদল ব্যবহার করা হয়েছে। যার সঙ্গে মেশানো হয়েছে বাংলাদেশের ফোক ডিজাই। প্রতিমার আদলে সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে বাংলাদেশের ঢ্যাপা পুতুল ও দাবার কুইন।
কলকাতার বেহালার নূতন সংঘ কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় জানান, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ এই দুই বাংলাকে এক সুতোয় গাঁথার একটা প্রয়াস আমাদের মাথায় ঘুরছিলো। এক কথায় বলা যেতে পারে এবারে আমাদের পূজোর মধ্য দিয়ে দুই বাংলার মনকে মিলিয়ে দেওয়া হলো, যা আমাদের কাছে উপরি পাওনা। এখন দেখার কলকাতার ঠাকুর দেখতে আসা দর্শনার্থীরা কতটা পছন্দ করেন। এছাড়াও কলকাতাস্থ বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, কলকাতার লোকজনদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাঙালি একটা উৎসব মুখর জাতি।
ডেপুটি হাইকমিশনার আরও বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি কথা বলে থাকেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কলকাতার এই দুর্গাপূজার সময় সেই বিষয়টি বেশি করে মনে পড়ছে। আর আমরা চাই বাংলাদেশের শিল্পীরা কলকাতায় যেকোনো উৎসব এবং অনুষ্ঠানে জায়গা করে নিক। তাদের শৈল্পিক ভাবনা নিয়ে চর্চা করুক কলকাতাবাসী। তবেই ম্যান টু ম্যান কানেক্টিভিটি আরও বাড়বে।