ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা কেন-কীভাবে করব
ক্রিটিক্যাল চিন্তা, বিশ্লেষণ করার দক্ষতা, সমস্যা সমাধান করার যোগ্যতা, আচার-আচরণের অভিযোজন, স্বশিক্ষায় নিজেকে নিয়মিত শেখানো, নিজে নিজে শেখার প্রক্রিয়া রপ্ত করা, যেকোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেয়ার মানসিকতা যাদের থাকবে তারাই এগিয়ে থাকবে এমনটি বলে থাকেন ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা কম-বেশি অনুমান করেন। একজন শিক্ষার্থীর এসব গুণ অর্জন করার সুযোগ ঘটে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার হাতেখড়ির মধ্য দিয়ে।
একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সম্ভাবনা অপার। সাংবাদিকতা থেকে পরবর্তী জীবনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করার সুযোগ থাকে। সাম্প্রতিক বিষয়ের সংবাদ, এডিটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ থাকে, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পডকাস্ট করা, ফটোগ্রাফিতে ঝোঁকপ্রবণতা থাকলে ফটোজার্নালিস্ট হওয়ার সুযোগ হয়। এর পাশাপাশি বর্তমানে ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায়, যেখানে ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওনির্ভর নানা কনটেন্ট তৈরি করে নিজের দক্ষতার জানান দেয়া ও উপার্জনের সুযোগ নিশ্চিত করা যায়। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক পরবর্তী জীবনে অন্য পেশায় কিংবা স্বাধীন সাংবাদিকতার সুযোগটিও লুফে নিতে পারেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করে তার ফলাফল মিডিয়ায় তুলে ধরার মাধ্যমে।
পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষকে যেকোনো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়ার জন্য এ পেশা সেরা। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে, করপোরেট হাউজসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরিতে এ পেশা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মবহির্ভূত যেকোনো বিষয় জাতিকে জানানোর মাধ্যমে ভুল সংশোধন ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তির চেহারা উন্মোচন করার জন্য সাংবাদিকতাই একমাত্র মোক্ষম পেশা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাই তাদের কাজের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে যাত্রা শুরু করতে পারে।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার হালহকিকত জানা যায়। তারা যত বেশি সাম্প্রতিক বিষয়ের তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক আলাপ হাজির করতে পারবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, অর্থবিষয়ক আপডেট মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে জাতিকে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আপডেট রাখতে পারে; তত বেশি একটি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যেতে পারবে। প্রশিক্ষিত ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মাধ্যমে অদূরভবিষ্যতে জাতীয় সাংবাদিকতায় গণতান্ত্রিক সমুন্নত ধারা টিকিয়ে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
একজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, ডাটা জার্নালিজম, ভিডিও কনটেন্ট তৈরি, ডাটা অ্যানালাইসিস করে সমাজের ট্রেন্ডকে শনাক্ত করতে শেখে। ক্যাম্পাস অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অতি গুরুত্বপূর্ণ, জটিল ও গভীর গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানকে হাজির করার যোগ্যতা অর্জন হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অপরাধকে হাজির করে সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করানোর সুযোগ থাকে। ক্যাম্পাসের পরিবেশবিষয়ক গবেষণা, শিক্ষকদের পরিবেশবিষয়ক গবেষণার সারনির্যাস জাতিকে জানানোর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি শক্তি, টেকসই জীবন, জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিবেশ, মানুষের খাপ খাওয়ানো বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকে। ক্যাম্পাসে ডাটা সাংবাদিকতায় ডাটাকে ব্যবহার করে গল্প তৈরি করা, ডাটা বিশ্লেষণ, তাকে দৃশ্যমান করে নিজেকে ক্রিটিক্যাল ও বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জনের বড় সুযোগটি তৈরি হয়।
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় ভালো করার জন্য ওয়ার্ড প্রসেসর-মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, গুগল ডকস, বিভিন্ন রিসার্চ প্লাটফর্ম যেমন জেস্টোর, গুগল স্কলার, একাডেমিয়া, রিসার্চগেট, নিয়মিত নোট রাখা; ডিজিটাল অডিও রেকর্ড; ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, মাল্টিমিডিয়া এডিটিং সফটওয়্যার—ফটোশপ, অ্যাডোব প্রিমিয়ার প্রো, অ্যাডোব অডিশন; কোলোবরেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টুলস—স্ল্যাক, মাইক্রোসফট টিমস, গুগল ওয়ার্কস্পেস ফ্যাসিলিটিজ, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট টুলস, ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলস, কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এগুলো দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে তৈরি করতে ও পরবর্তী জীবনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।