জলবায়ু পরিবর্তনমতামতহাইলাইটস
নদী ভাঙন বাংলাদেশের বড় রেড এলার্ট!

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসা এক গবেষণায় জানায়, ১৯৬৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে শুধু পদ্মার ভাঙ্গনেই ৬৬ হাজার হেক্টর বা ৬৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। যার মোট এলাকার আয়তন হবে তিনটি ঢাকা শহরের সমান। নাসা তাদের প্রতিবেদনে পদ্মাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাঙনপ্রবণ নদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক অভ্যন্তরীন সর্বোচ্চ প্যানেল-আইপিসিসি বলছে- নদীভাঙ্গনই এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকির দুর্যোগ।
বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা তথ্যমতে, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা গিয়ে দাড়াবো প্রায় ১ কোটিতে। এখন বছরে গড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হচ্ছেন। এসব মানুষ জীবন জীবিকা আর কর্মসংস্থানের জন্য গ্রাম ছেড়ে আসছেন শহরে।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি- আইএফআরসিএস এর দক্ষিণ এশিয়া প্রধান বব ম্যাকরো ৮ বছর আগেই নদী ভাঙনকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, নদী ভাঙন এ দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাকে যে কোন দুর্যোগের চেয়ে বেশি মাত্রায় ধ্বংস করছে। কিন্ত এতো বড় সমস্যাটি নিয়ে তেমন কোন মহা পরিকল্পনাই জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে করা হচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্যনীয় হলো-বড় বড় নদীগুলির ভাঙ্গনের তীব্রতা গেলো কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। ফলে বহু পাড়া-মহল্লা, ইউনিয়ন এমনকি উপজেলার মানচিত্রও পাল্টে যাচ্ছে। এমনকি সীমান্তের অনেক নদীর অস্বাভাবিক ভাঙ্গন দেশের সীমান্ত রেখা বদলে দিচ্ছে। এমন আশংকা উল্লেখ করেছে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস-সিইজিআইএস।
সীমান্ত এলাকায় নদী ভাঙ্গন কেনো এতো বিধংসী হচ্ছে- তাও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন-বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যে ৫৪টি আন্তর্জাতিক নদী প্রবাহিত হচ্ছে তার প্রধান ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, যমুনা ও মেঘনা। এ চারটি নদীই সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গনের শিকার। নদীরপাড় গঠনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশী ভাঙ্গনপ্রবণ হ’ল যমুনা নদী। এরপর পদ্মা। অতিরিক্ত পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নদীর গতিপথ পরিবর্তন এবং শাখা-উপশাখা দখল ও ভরাটও ডেকে আনছে নদী ভাঙ্গনের এই মহা সর্বনাশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানুষের লোভও এজন্য দায়ী বলে মনে করছেন গবেষকদের অনেকে। প্রধান নদীগুলো ছাড়াও তিস্ত, ধরলা, আত্রাই, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, খোয়াই, সুরমা, মনু, জুরী, সাঙ্গু, ধলাই, গোমতী, মাতামুহুরি, মধুমতি, সন্ধ্যা, বিশখালী এসব নদীও ভাঙ্গনপ্রবণ। এসব নদীর অন্তত দেড়’শ স্পটে এখনো বড় ধরনের ভাঙ্গন বিদ্যমান।
আশংকার বিষয় হচ্ছে, এমনিতেই বাংলাদেশে প্রতিবছরই আবাদী জমি কমছে। বাড়ছে মানুষ। নদীভাঙ্গা উদ্বাস্তু মানুষের চাপ পড়ছে বড় শহরগুলোতে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে ভবিষ্যত কি ? যদিও চাইলেও পরিকল্পনা, মহা পরিকল্পনা করেও প্রকৃতির এতো বড় বিপর্যয় মানুষের পক্ষে ঠেকানো সম্ভব নয়। তারপরও এখন সর্বোচ্চ সতর্কতা নিতে হবে নদী ভাঙ্গন কমিয়ে আনতে। এজন্য শুধু জাতীয় নয়, নিতে হবে আন্তর্জাতিক সহায়তা, পরামর্শ ও পরিকল্পনা।
লেখক: নির্বাহী সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিষ্ট ফোরাম।