দিনে ৪০ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন হাবিব
মহামারি করোনার সময় সবার মতো বিপাকে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর এলাকার মো. হাবিবও। মসজিদ-মাদরাসায় কাজ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খাচ্ছিলেন। নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নানা চিন্তা ভাবনা শেষে সিদ্ধান্ত নেন আচার বানানোর। এরপরই বিভিন্ন রকমের মৌসুমি কাঁচা ফল একসঙ্গে ছ্যাঁচে মিশ্রণ তৈরি করে রকমারি মসলা দিয়ে তৈরি করেন আচার। এরপর সেই আচার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ঘাটে বিক্রি করা শুরু করেন। আর সেই আচার অল্প সময়েই মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে যায়। এই আচারে কোনো রকম ক্ষতিকর দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। এমনকি এই আচার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে, মুখে রুচি আসবে বলে দাবি বিক্রেতার।
আচারের মূল কারিগর হাবিব বলেন, করোনার সময়ে যখন কোনো কাজ ছিল না তখন আচার বানিয়ে বিক্রি করা শুরু করি। বর্তমানে আচারটি অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন অর্ডার করে এসে আচার নিয়ে যায়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত আমার এই আচার খেয়ে থাকে। অনেকেই বাসায় নিয়ে যায় এই আচার ভাত দিয়ে খাওয়ার জন্য। ‘আম, আমড়া, তেঁতুল, জলপাই, আমলকী, চালতা, বড়ই, কলা, হরিতকী, বয়রা, পেয়ারা, করমচা, কালিজিরা, ধনিয়া ও বিভিন্ন মসলা সহ ৪২ পদের মিশ্রণ করে এই আচার বানানো হয়। ছোট কাপ প্রতি পিস ১০ টাকা, ২৫০ গ্রাম ৯০ টাকা, ৬০০ গ্রাম ১৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন সকাল ১০ থেকে শুরু করে রাত ১১টা পর্যন্ত এই আচার বিক্রি চলে। বিশেষ করে ছুটির দিনে অনেক বেশি বেচাকেনা হয়ে থাকে। সেদিন প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো বেচাকেনা হয়ে থাকে।’
হাবিব আরও বলেন, প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মণ আচার খুচরা বিক্রি হয়ে থাকে। একই সঙ্গে অর্ডারও রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে খুচরা বেচাকেনা কম হয়। তিন মণ আচার বানাতে খরচ হয় প্রায় ১৭ হাজার টাকা। আর তা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই অর্ডার করে আচার নিয়ে যায়। হাবিবের ছেলে খাদেমুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগে করোনা ছিল তখন থেকেই এই ব্যবসার শুরু হয়। আমার বাবা মসজিদ-মাদরাসায় চাকরি করতেন। করোনার কারণে মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যায়। মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার বাবা বেকার হয়ে পড়েন। তিনি আগে থেকেই আচার বানাতে জানতেন। কোনো উপায় না পেয়ে আচার বানানো শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই আচার জনপ্রিয় হয়ে যায়। বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আগে অন্য চাকরি করতাম। তবে আচারের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় আমিও বাবার সঙ্গে আচার তৈরি ও বিক্রির কাজে যোগ দেই। পরে আরও তিনজন কর্মচারী নেই। আমাদের এই ব্যবসা আরও বড় করার চিন্তা রয়েছে। বর্তমানে আমরা পাঁচজন এই আচার তৈরি করি। আগে এখানে বড় দোকান ছিল। ফেরি আসার কারণে আমাদের দোকানগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে এখন দোকান ছোট হয়ে গেছে। আগের থেকে বেচাকেনাও কমে গেছে। আশা করছি দোকানটা বড় করতে পারলে আবার আগের মতো বেচাকেনা হবে।