মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আবারো আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ভুলবেন না।’
বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐতিহাসিক শহর নয়াদিল্লিতে জি-২০ লিডারস সামিটে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এ আমন্ত্রণ দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গভীরতা ও উষ্ণতার প্রতিফলন।’
এ সময় ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ কথাটিকে সম্মেলনের থিম হিসেবে গ্রহণ করায় মোদির প্রশংসা করেন তিনি। এছাড়া গ্লোবাল সাউথের হয়ে আওয়াজ তোলার জন্য ভারতীয় জি-২০ প্রেসিডেন্সিকেও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রথম ভাষণ উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আন্তর্জাতিক দায়িত্ব এমনভাবে পালন করতে হবে যাতে প্রতিটি ব্যক্তি নিজের ও পরিবারের সমৃদ্ধি ও সুখের জন্য মানসম্মত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে পারে।’
এ দৃষ্টিভঙ্গি এখনো প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আমাদের পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কভিড-১৯ মহামারী, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দিয়ে প্রভাবিত। এসব চ্যালেঞ্জ সমগ্র মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য জন্য একটি একক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করাকে অপরিহার্য করে তোলে।’
এ সময় সবুজ ও টেকসই উন্নয়ন এবং সার্কুলার ইকোনমির গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবেশ সচেতনতা অনুশীলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির শুরু করা লাইফস্টাইল আন্দোলনের প্রচারাভিযানকে সমর্থন করি।’
শেখ হাসিনা জানান, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ২০৫০ সালের মধ্যে এক কোটি ৩৩ লাখ মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ খুব কম, তা সত্ত্বেও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবেলায় অনেক রূপান্তরমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এ উদ্যোগের অধীনে গত আগস্ট পর্যন্ত প্রায় আট লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে বাড়ি ও জমি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজনে সাফল্য লাভ করেছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা চার হাজার ৫৩০টি সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করেছি। আমরা এখন বহুমুখী ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরো ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছি।’