প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল সে সময় রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের শিকার অন্য শহীদদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ মহাপরিদর্শক এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দেশের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আরো একবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
একে একে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ও সরকারদলীয় চিফ হুইপ নুরে আলম চৌধুরী লিটন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনে যান। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় অনুষ্ঠিত এ দোয়া মাহফিলে বঙ্গবন্ধু ভবনে বসে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এরপর দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন তারা।
এ সময় জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আব্দুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাহজাহান খান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, সারহান নাসের তন্ময়, যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবউদ্দিন আজম, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়ের, গোপালগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ রকিব হোসেন, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ভোরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
এরপর ধানমন্ডি থেকে তিনি বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের অন্য শহীদেরা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া করেন। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাস টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পান। বাঙালি জাতি প্রতি বছর এ দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার তার পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে।