দেশহাইলাইটস

উদ্বোধন ৭ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু এক বছর পর

শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনাল

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আগামী ৭ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও টার্মিনালটির উল্লেখযোগ্য কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। লিফট ও এস্কেলেটর, স্ক্যানিং ব্যবস্থা, লাগেজ ও ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা এখনো যাত্রীসেবার উপযোগী হয়ে ওঠেনি। নতুন টার্মিনালে ১৪টি বোর্ডিং ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে, যেগুলোর সিংহভাগ কাজ বাকি। এসব অবকাঠামোর পাশাপাশি টার্মিনালের কার্গো হ্যান্ডলিং, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, টার্মিনাল বোর্ডিংয়ের মতো সেবাগুলো দেয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত চুক্তি করতে পারেনি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের মতো পরিষেবার কাজও বাকি রয়েছে। সব মিলিয়ে আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে টার্মিনালটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে সময় লেগে যাবে এক বছরেরও বেশি। গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ টার্মিনালটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হতে পারে

‘‌হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রথম পর্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে এ তৃতীয় টার্মিনাল। ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)।

২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। বেবিচকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন টার্মিনাল চালুর পর শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা আড়াই গুণ বাড়বে।

বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরের বার্ষিক যাত্রী ধারণ সক্ষমতা ৮০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে প্রতি বছর নতুন করে আরো ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বেবিচকের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রুটের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন নতুন গন্তব্য বাংলাদেশের আকাশপথের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তৃতীয় টার্মিনালের সার্বিক অগ্রগতি ও ‘‌সফট ওপেনিং’ সম্পর্কে জানাতে গতকাল নির্মাণাধীন টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে বেবিচক। এতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিং হয়েছিল। তখনই প্রধানমন্ত্রী সিভিল এভিয়েশনকে তাগাদা দিয়েছিলেন, প্রকল্পটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে গুণগতমান বজায় রেখে শেষ করতে হবে। তার দিকনির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজগুলো সেভাবেই এগিয়ে নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৭ অক্টোবর এ প্রকল্পের উদ্বোধন, সফট ওপেনিং করবেন।’

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক চাপে তড়িঘড়ি করে টার্মিনালটি চালু করা হচ্ছে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সফট ওপেনিংয়ের জন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাপ নেই। আর এটা অন্য প্রকল্পগুলোর মতোও নয়। এ প্রকল্পের সবচেয়ে ভালো দিক হলো বাংলাদেশের যেকোনো প্রকল্পের চেয়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে আমরা কাজটা করতে পেরেছি।’

সফট ওপেনিংয়ের পর টার্মিনালের বাকি কাজগুলো কখন কীভাবে করা হবে, ব্রিফিংয়ে তা তুলে ধরেন মফিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবর সফট ওপেনিংয়ের পর পরবর্তী সময়ে কী কাজ হবে, দিন-সপ্তাহ-মাস অনুযায়ী সব ঠিক করা আছে। আমরা সেভাবেই এগোচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা, আগামী বছরের শেষ নাগাদ থার্ড টার্মিনাল জনসাধারণের জন্য চালু করে দেয়া। তবে আমাদের চেষ্টা থাকবে কাজ এর আগেই করার।’

‘‌সফট ওপেনিং মানে আমাদের স্ট্রাকচার রেডি, আমাদের ইকুইপমেন্টগুলো বসে যাচ্ছে। কিন্তু যে সংস্থাগুলো এখানে কাজ করবে তাদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও সমন্বয়ের দরকার আছে। ইকুইপমেন্টগুলোর সঙ্গে এখানে যারা কাজ করবেন, তাদের ক্যালিব্রেশনের প্রয়োজন আছে। সফট ওপেনিংয়ের দিনে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে একটি ফ্লাইট অপারেট করে দেখব। তবে এটাকে অপারেশনাল বলা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হবে না’, বলেন তিনি। বর্তমানে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮২ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, সফট ওপেনিংয়ের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করা। আমরা আশা করছি ৭ অক্টোবরের আগেই এ লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। নির্মাণকাজের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় নির্ধারিত সময়সীমার আগে ছিলাম। এক সপ্তাহ ধরে এখানে গড়ে ১১ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। বিশাল কর্মযজ্ঞ। একটাই লক্ষ্য, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button