দেশহাইলাইটস

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য চারটি ট্রানজিট রুটের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম ও মোংলা থেকে পণ্য পরিবহন

চট্টগ্রাম ও মোংলা থেকে পণ্য পরিবহন চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর হয়ে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহনের জন্য চারটি রুটের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অনুমোদন পাওয়া প্রটোকল রুটগুলো হলো চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, মোংলা বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, চট্টগ্রাম-বিবির বাজার-শ্রীমন্তপুর এবং মোংলা বন্দর-বিবির বাজার-শ্রীমন্তপুর। ত্রিপুরা রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা এরই মধ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। এর ফলে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। ত্রিপুরা ও অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য চিহ্নিত চারটি রুট সম্পর্কে এরই মধ্যে অবহিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।’

সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কলকাতা বন্দর থেকে শিলিগুড়ি করিডোর হয়ে রাজ্যগুলো পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পণ্য বাণিজ্যে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে রাজ্যগুলোর ব্যবসায়ীদের। দীর্ঘদিন ধরেই এ সমস্যার সমাধান হিসেবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ চেয়েছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়াতে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগও করা হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বন্দর দুটি ব্যবহারের মাধ্যমে ভারত লাভবান হচ্ছে। আমাদেরও এখান থেকে লাভবান হওয়ার জায়গাগুলো বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। ট্রানজিটের চার রুট অনুমোদনের মাধ্যমে আরেকবার ‌ওপেন রিজিয়নালিজম বা মুক্ত আঞ্চলিকতার স্পিরিটের প্রতি নিজের অঙ্গীকারাবদ্ধতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মধ্যে এক সময় একটি ত্রিদেশীয় মহাসড়ক নির্মাণের কথা উঠেছিল। বাংলাদেশ এ নিয়ে আগ্রহও দেখিয়েছিল। যদিও এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কম। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের বিষয়গুলোয় বেশ ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের ওপর দিয়ে নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য পারস্পরিকতার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে পারলেই আমার বিশ্বাস তা সবার জন্যই ভালো ফল নিয়ে আসবে।’

আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতেও বাংলাদেশের বন্দর দুটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির বড় একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক কানেক্টিভিটি। উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক কানেক্টিভিটিতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে চীন। অন্যদিকে ২০১৪ সাল থেকে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ (পূর্বদিকে সক্রিয়তা বাড়ানো) নীতিমালার আওতায় নিজ সীমান্তের পূর্বদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংযোগ শক্তিশালী করায় বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে ভারত। এজন্য প্রধানত উত্তর-পূর্ব ভারতকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক কানেক্টিভিটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোর দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। যদিও এক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কোনোটিই সমুদ্রতীরবর্তী নয়। বাংলাদেশের দুই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেশটির এ সমস্যাকে অনেকটাই নিরসন করে দিয়েছে।

আঞ্চলিক জোট সার্কের পরিবর্তে বঙ্গোপসাগরভিত্তিক জোট বিমসটেকে (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) এখন বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভারত। আর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যকার গেটওয়ে হিসেবে এ মুহূর্তে বিমসটেক অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক অবকাঠামো বিনিয়োগ প্রতিযোগিতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে চীন। অবকাঠামো প্রকল্পনির্ভর কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এ অঞ্চলে ভারতের বড় ভরসার জায়গা এখন জাপান।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button