
রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুত চান-ওচা। থাইল্যান্ডে গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে প্রায়ুত চান-ওচার সামরিক বাহিনী সমর্থিত দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টির ব্যাপক ভরাডুবি ঘটে। এর পর থেকেই তিনি এমন ঘোষণা দিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। খবর রয়টার্স ও ব্যাংকক পোস্ট।
এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০১৪ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন প্রায়ুত চান-ওচা। ওই সময় স্বল্পকালের জন্য ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিলেও প্রায় এক দশক ধরে এ পদে আসীন রয়েছেন তিনি।
থাইল্যান্ডের সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ুত চান-ওচা একজন কট্টর রাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সামরিক জান্তার নেতা হিসেবে থাইল্যান্ডে নির্বাহী ক্ষমতার শীর্ষ পদে আসীন ছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে তাকে আরো চার বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বের ম্যান্ডেট দেয় থাই পার্লামেন্ট। যদিও সে সময় বিষয়টিকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তার বিরোধীরা।
তবে মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর প্রায়ুত চান-ওচার কাছ থেকে এ ধরনের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। নির্বাচনে থাই পার্লামেন্টে ৫০০ আসনের মধ্যে তার দল ইউনাইটেড থাই নেশন পার্টি ৩৬টি আসন পায়। পরবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রায়ুত চান-ওচা।
সরকারপ্রধান হিসেবে কোনো ধরনের ব্যর্থতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ৬৯ বছর বয়সী প্রায়ুত চান-ওচা। তার ভাষ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি আমাদের জাতি, ধর্ম ও রাজতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়ার মাধ্যমে প্রিয় জনগণকে লাভবান করতে কঠিন পরিশ্রম করেছি। আর জনগণ এখন এর সুফল ভোগ করছে। স্থিতিশীলতা ও শান্তি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রেই আমার দেশকে আমি শক্তিশালী করেছি এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনেক বাধাকেই অতিক্রম করেছি।’
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রায়ুত চান-ওচাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আদালতে মামলা, পার্লামেন্টে আস্থা ভোট, বিরোধীদের পক্ষ থেকে তীব্র বিক্ষোভসহ আরো অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই সুযোগসন্ধানী হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন তিনি।
এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায়ুত চান-ওচার উত্তরসূরি কে হবেন, সে বিষয়ে আগামীকালই দেশটির পার্লামেন্টে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়েও অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
নির্বাচনে প্রায়ুত চান-ওচার দলের ব্যাপক ভরাডুবি হলেও কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সর্বোচ্চসংখ্যক আসন পেয়েছে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পিতা লিমজারোয়েনরাতের নেতৃত্বাধীন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। দলটি পার্লামেন্টে আসন পেয়েছে ১৫১টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক আসন পেয়েছে দেশটির প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রভাবাধীন ফেউ থাই পার্টি, ১৪১টি।
পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে দুই দল এরই মধ্যে সমঝোতায় এসেছে। আটটি দলের সমন্বয়ে নতুন এক কোয়ালিশন গঠন করেছে দল দুটি। ফেউ থাই পার্টির পক্ষ থেকে পার্লামেন্টে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা পিতা লিমজারোয়েনরাতের নাম প্রস্তাবেরও কথা রয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত পিতা লিমজারোয়েনরাত প্রধানমন্ত্রীত্বের যোগ্য কিনা সে বিষয় নিয়েই কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি দেশটির নির্বাচন কমিশন। এমনকি বিষয়টিকে সাংবিধানিক আদালতের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে কিনা এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি তারা। বিষয়টি নিয়ে আজই আবার বৈঠকে বসার কথা রয়েছে থাই নির্বাচন কমিশনের।
থাই পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ওয়ান মুহামাদ নূর জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় অনুযায়ী আগামীকাল বিকালে দেশটির পার্লামেন্টে এ-সংক্রান্ত ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় ধরে বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টের এমপি ও সিনেটরদের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।
দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রধান ইত্তিপর্ন বুনপ্রাকং জানিয়েছেন, পিতা লিমজারোয়েনরাত কোনো ধরনের রাজনৈতিক দপ্তরের নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য কিনা সে বিষয় সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন তারা এখনো যাচাই-বাছাই করে দেখছেন।
থাই নির্বাচনে বিজয়ী দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পদে আট দলের মনোনীত পিতা লিমজারোয়েনরাতের পার্লামেন্টের সদস্যপদই এখন হুমকির মুখে। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে সম্প্রচার শুরু করা একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আংশিক মালিকানা থাকার অভিযোগ উঠেছে। থাইল্যান্ডের সংবিধানে সাধারণ নির্বাচনে কোনো গণমাধ্যমের শেয়ারহোল্ডারদের অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা রয়েছে। এর আগে আইটিভি নামে ওই চ্যানেলের মালিকানা-সম্পর্কিত অভিযোগ বাতিল করে দিয়েছিল থাই নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে পিতা লিমজারোয়েনরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সংবিধান লঙ্ঘনের বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তিনি।