ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন বা নির্বাচনবিষয়ক অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল আজ বাংলাদেশ সফরে আসছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে আসা ইইউর প্রতিনিধি দলটি ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ দেশে অবস্থান করবে। তাদের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতেই নির্ধারণ হবে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি পাঠাবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিং হয় বৃহস্পতিবার। ওই সময় ইইউ ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন সম্পর্কে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবগত করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। প্রতিনিধি দল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ সফরটির বিষয়ে অনেক দিন ধরে কথাবার্তা হচ্ছে। তাদের মিশনটা মোর ইলেকশন স্পেসিফিক এটা সত্যি। তারা এটা এক্সপ্লোরেটরি মিশন করবে। সেখানে তারা নির্ধারণ করবে যে ইলেকশন অবজারভার মিশন পাঠাবে কি পাঠাবে না।’
ইইউ প্রতিনিধি দলটির কার্যক্রম সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউর ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন বা অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল বাংলাদেশ সফর করবে। এ মিশনের কাজ হবে মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে মূল্যায়ন করা। পাশাপাশি তারা সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করতে ইচ্ছুক বলে ঢাকাস্থ ইইউ ডেলিগেশন জানিয়েছে।’
মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে এ সফর অনুষ্ঠিত হবে বলে এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করণীয় নেই। অনুসন্ধানী মিশন থেকে পাওয়া এসব তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ১৬ দিনের সফরে এলেও তারা এখনো প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সম্পর্কে কিছুই জানে না। এ বিষয়ে ইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিনিধি দলের সদস্যদের বিষয়ে এখনো তারা অবগত নন। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ইইউ প্রতিনিধি দল ১১ জুলাই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য (এমইপি) গত জুনে এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচনের বিষয়ে ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর জবাবে বোরেল জানান, ইইউ বাংলাদেশের সব দল ও সব নাগরিককে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ও সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আস্থা সৃষ্টির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের। প্রকৃত অর্থে প্রধান দলগুলোর মধ্যে আলোচনা, নাগরিক সমাজের সুযোগ অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। মত প্রকাশ ও সমবেত হওয়ার স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকারগুলোর সুরক্ষা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের বিষয়ে ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশ সরকার ও সব পক্ষকে জোরালোভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। ইইউ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কার্যকারিতা, সম্ভাব্যতা ও যৌক্তিকতা যাচাইয়ে একটি অনুসন্ধানী মিশন বাংলাদেশে পাঠানো হবে।