পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের এক বছর পূর্তি হয়েছে আজ। এই এক বছরে দেশের কৃষি রাজধানী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুর। যে জেলার কৃষকদের নিজের উৎপাদিত ফসল এক সময় বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিত হতো অথবা গবাদী পশুকে খাইয়ে দিতে হতো। সেই জেলার কৃষকরা যোগাযোগ ব্যবস্থায় কল্পনাতীত উন্নতি হওয়ার ফলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন ঘরে বসে ইউরোপে ফসল বিক্রি করছে কয়েক গুণ বেশি দামে। এইসব কিছুর মূলে রয়েছে পদ্মা বহুমূখী সেতু। এছাড়া পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্তির মাস জুনের পহেলা তারিখে জেলায় কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে ৬৮৬ একর খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা)। যা কৃষি সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দেবে।
২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উদ্ধোধনের পর বদলে গেছে শরীয়তপুরের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির চিত্র। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে গত চার মাসে শরীয়তপুরের কৃষকরা ২১৬ মেট্রিক টন সবজি রপ্তানি করে আয় করেছে ২৩ লাখ ইউরো। যা বাংলাদেশি মুদ্রার মান অনুযায়ী ২৩ কোটি টাকার বেশি। শরীয়তপুরের কৃষি খাতকে আরও উন্নত ও গবেষণাধর্মী করার জন্য ইতোমধ্যে জেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইন পাস করেছে মন্ত্রীসভা।
রাজধানী থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে হওয়ায় শরীয়তপুরের বিভিন্ন কৃষি বাজারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুষ্টিয়া, ফেনী, গোপালগঞ্জ, নাটোর, যশোর, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ প্রায় সারাদেশের ব্যবসায়ীরা কৃষি পণ্য ক্রয় করতে আসেন। শরীয়তপুরে ধান, পাট, গম, ভুট্টা, চিনা বাদাম, হলুদ, মরিচ, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, সয়াবিন, সরিষা, কালোজিরা, তিলসহ আলু, কুমড়া, করলা, বেগুন, কচু, চিচিংগা, ঝিংগা, ডাটা, লালশাক, পুঁইশাক, পেঁপে, শসা, লাউ, টমেটো, পটল, আখ, ডাল, ধনিয়া, তরমুজ, পানসহ সকল প্রকার কৃষি পণ্য উৎপাদন করে জেলার কৃষকরা।
সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন বাড়াতে পতিত জমিকে চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু করছে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। মানসম্মত ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার কৃষক ও কৃষাণীকে। মাটির ধরণ অনুযায়ী অনাবাদী জমিতে সবজি উৎপাদনে কাজ শুরু করেছে কৃষি বিভাগ। এছাড়া নতুন করে চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে ৪ হাজার ৭২০ হেক্টর অনাবাদী জমি। যার ফলে গত রবি মৌসুমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৬৭ কোটি টাকার।