
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর কাছে না পৌঁছে এগুলোর গোশত, না পৌঁছে এগুলোর রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।
এক. মুসলিম হওয়া। অতএব, অমুসলিমদের ওপর কোরবানির বিধান প্রযোজ্য হবে না।
দুই. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। অতএব, অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি নির্দিষ্ট সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি আবশ্যক নয়।
তিন. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া।
পাঁচ. মুকিম হওয়া, অর্থাৎ কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া।
ছয়. জাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া। অর্থাৎ কেউ ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সময়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। কোরবানির ওয়াজিব হওয়ার জন্য ওই সম্পদ এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (আদ দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা : ২১৯, খণ্ড : ৫)
আর নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখনো কোরবানি করা ওয়াজিব। সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমমূল্যের নগদ অর্থ বা বাড়ি বা ব্যাবসায়িক পণ্য বা অন্যান্য আসবাবপত্রের মালিক হবে। (তাবয়িনুল হাকায়িক, পৃষ্ঠা : ১০, খণ্ড : ৬)
অতএব আমাদের কর্তব্য, উল্লিখিত শর্তগুলো পরিবারের যাদের মধ্যে পাওয়া যায়, তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এরপর যদি সামর্থ্য থাকে বাকি যাদের ওপর ওয়াজিব ছিল না, তাদের পক্ষ থেকেও দেওয়া যেতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, নারীর গয়না ও নগদ অর্থের কারণে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, কিন্তু কোরবানি দেওয়া হচ্ছে স্বামীর পক্ষ থেকে, যার ওপর কোরবানি ওয়াজিবই ছিল না। আবার অনেক সময় অবিবাহিত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক ছেলেমেয়েদের ছোট মনে করে তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ তাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার কারণে তাদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব ছিল।
কোরবানি দেওয়ার সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা আবশ্যক। যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত তাদের অনেকে আবার বড় পশুতে শরিক দিতে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকায় এক শরিক কিংবা দুই শরিক দেয়, অথচ দেখা যায় যে তার পরিবারের চার সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, তিনি একটু ছোট পশুতে কিংবা বকরি/ভেড়া দিয়ে কোরবানি করলে একই বাজেট দিয়ে চারজনের পক্ষ থেকেই দেওয়া যেত। যাদের সামর্থ্য কম, তাদের উচিত এ বিষয়গুলোও খেয়াল করা। মহান আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন। আমিন