
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিতে সত্যায়নে স্বচ্ছতার কাজ করছে হাইকমিশন। চলতি বছরে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা ২০০৭ এর পর ২০২৩ এ রেকর্ড। ইতিমধ্যে ৪,২৭,৭৫৯ জন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। এর মধ্যে ২ জুন পর্যন্ত ৩,৫৭,৩২৮ জন কর্মী ডিমান্ড সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন। ২ জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় পৌছেছেন, ১,৬৩,৪০৩ জন কর্মী। এছাড়া সত্যায়নকৃত ১,৯৩,৯২৫ শ্রমিক ঢাকা থেকে আগমনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে কেউ কেউ অভিযোগ করছেন হাইকমিশন কর্তৃক সত্যায়নে সময় লাগছে বেশি। এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার জানিয়েছেন, হাইকমিশন কর্তৃক ইতোমধ্যে সত্যায়নকৃত বাকী ১,৯৩,৯২৫ শ্রমিকের ভিসা লাগিয়ে মালয়েশিয়ায় না পাঠিয়ে শ্রমিকের ডিমান্ড আগামীতে সত্যায়ন করা হবে তাদের ভিসা আগে লাগিয়ে যারা ডিমান্ড সত্যায়ন দেরি হচ্ছে বলে হাইকমিশনের বিরুদ্ধে অমুলক প্রচারণা চালাচ্ছে তারা কি সঠিক তথ্য জানেন না, না-কি অন্য কোন বিষয় আছে?
৪ জুন রবিবার হাইকমিশনের লেবার মিনিস্টার নাজমুছ সাদাত সেলিম জানান, ইতিমধ্যে কিছু কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তারা শ্রমিকদের মাসের পর মাস কাজ না দিতে পেরে বসিয়ে রাখছে। এসব অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে হাইকমিশন কোম্পানির সাথে কথা বলে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। সংগত কারণেই কর্মীরা মালয়েশিয়ায় এসে যেন কাজ না পেয়ে যাতে করে বসে না থাকতে হয় সেজন্য ঐ কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা কতটুকু তা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তারা শ্রমিকদের কাজ, বেতন-ভাতাদি, আবাসন সহ অন্যন্যা সুযোগ সুবিধা সঠিক সময়ে নিশ্চিত করার সামর্থ আছে কি না তথ্য উপাত্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে হাইকমিশন থেকে কলিং ভিসার সত্যায়ন করা হচ্ছে।
লেবার মিনিস্টার আরোও জানান, সত্যায়নে স্বচ্ছতার জন্য যেমন দরকার প্রয়োজনীয় সময় তেমনই দরকার দক্ষ লোকবল। হাইকমিশনের শ্রম বিভাগ এসব সত্যায়নের দায়িত্বে ন্যাস্ত। ছুটির দিন সহ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে লাখ লাখ সত্যায়নের আবেদনগুলো সম্পন্ন করছেন। এজন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সকলের সহযোগিতা ও সময় প্রয়োজন। এ দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ মালয়েশিয়া সফরকালে গত ২ জুন বাংলাদেশ হাইকমিশনে ডিমান্ড সত্যায়নের কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন।
মাঝখানে মালয়েশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল দেশটির মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চুড়ান্ত অনুমোদনের পর বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়নের প্রয়োজনীয়তা নেই। কিন্তু শ্রমবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কলিং ভিসায় দূতাবাসের নজরদারি অব্যাহত না রাখলে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি শ্রমিকরা প্রতারিত কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন। তাই স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জনশক্তি নিয়োগ করা হলে নিয়োগকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যাবে।
এদিকে সত্যায়নে মূল কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করে নিশ্চিত হতে হয় যে, উল্লেখিত কোম্পানি বাস্তবে এর কোন অস্তিত্ব আছে কি না। শ্রমিকদের বছরের পর কাজ দেওয়ার মত কাজ আছে কি না। তাদের বেতন ভাতাদি সময়মত পরিশোধ করার জন্য মালিকের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ জমা আছে কি না। যেমন ৫০ জন শ্রমিকের জন্য কমপক্ষে ২ লাখ রিংগিত, ১০০ জন শ্রমিকের জন্য ব্যাংকে ৪ লাখ রিংগিত জমা থাকতে হবে। তাছাড়া শ্রমিকরা কাজ শেষে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আবাসন ব্যাবস্থা মালিকের করতে হবে। নির্মান শ্রমিক হলে সরকার ঘোষিত সিআইডিবি কার্ড প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক। তাছাড়া প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য (সকসো) জীবন বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করতে হবে। উপরোক্ত তথ্য গুলো প্রমান করতে যথোপযুক্ত তথ্য প্রমান থাকতে হবে। এর কোনটা কম হলে হাইকমিশন থেকে বলা হয় এগুলো পূরণ করার জন্য নতুবা হাইকমিশন সত্যায়ন করে না।
মালয়েশিয়ার বাস্তবতার নিরিখে এ ধরণের অপপ্রচার করে সাধারন মানুষসহ দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করলে তার ফলে ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্বল বিক্রি করে মালয়েশিয়ায় আসা নিরীহ শ্রমিকগন চাকরি না পেলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগনকে আর কিছু না হউক অন্তত বিবেকের কাছে জবাব নিশ্চয়ই দিতে হবে বলে এমনটিই বললেন, হাইকমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার।
২ জুন পুত্রজায়ায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি’র সাথে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুতিন বিন ইসমাইল এর বৈঠক হয়েছে। এ সময় তারা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্নয়ন, কর্মীদের সামগ্রিক সুরক্ষা, রিক্যালিব্রেশন এবং শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। এরপর ওইদিন বিকেল ৩টায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী ভি শিবকুমার এর আরেকটি বৈঠক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আরো সুষ্ঠু ও নিরাপদ স্বল্পতম সময়ে হাউজমেইড ও সিকিউরিটি গার্ডসহ অধিক সংখ্যক কর্মী প্রেরণ বিষয়ে আলোচনা হয়।