কৃষিহাইলাইটস

অসময়ে তরমুজ চাষে সফল নীলফামারীর ৩ কৃষক

নীলফামারীদূর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে সেগুলো লাউ বা কুমড়া নয়। মাচায় জাল দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে ঝুলছে হলুদ-সবুজ-ডোরাকাটা রসালো তরমুজ। অসময়ে উৎপাদিত তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নীলফামারীর তিন কৃষক। কৃষি বিভাগের সহায়তায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। ফলে অনেক কৃষকই এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র মতে, নীলফামারী জেলা শীতপ্রধান হওয়ায় জেলার কোথাও স্বাভাবিক সময়ে তরমুজ চাষ করেন না কৃষক। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে এ অঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী। দেশের অন্যান্য জেলায় স্বাভাবিকভাবে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম পর্যন্ত তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কিন্তু নীলফামারীতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়। কৃষি বিভাগের অনুপ্রেরণায় এবার সদরের উপজেলার তিনজন কৃষক ৩৪ শতাংশ জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন

জেলায় প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করা তিন কৃষকের মধ্যে অন্যতম কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক সামছুল হক (৩৫)। নিজের কৃষি জমি ২৬ শতক হলেও বাৎসরিক চুক্তি নিয়ে চার বিঘা জমিতে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল ফলান তিনি। এবার ১৫ শতক জমিতে চাষ করেছেন গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। জমিতে চারা রোপণের ৭৫ দিনে অসংখ্য তরমুজের দেখা মিলেছে তার ক্ষেতে। জেলায় পরীক্ষামূলক চাষে এমন সফলতা সাড়া ফেলেছে এলাকায়। ফলে ব্যাপক লাভের আশা করছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষেতে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচায় অসংখ্য ছোট বড় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলোর রং বাহারি। কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি হলুদ, কোনোটি আবার কালচে-সবুজ। কৃষক সামছুল হক  বলেন, আমি প্রতিবছর বেগুন, পটোল, ঢ্যাঁড়স ও মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য শাকসবজির আবাদ করি। এই বছর প্রথম ১৫ শতাংশ জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। চাষ করার পর কৃষি অফিস থেকে এসে আমার চাষাবাদে পরামর্শ দেন কর্মকর্তারা। আমি শুধু একটু শ্রম দিছি। আমার এখানে কোনো রোগবালাইও নাই, ফলনও ভালো আছে। ১৫০টা তরমুজ গাছ রয়েছে। এতে ৬০০ এর বেশি তরমুজ আছে।

তিনি আরও বলেন, আমি মাত্র খরচ করেছি ১৬ হাজার টাকা। ভালো লাভ আসবে আমার। অনেক কৃষক জিজ্ঞেস করতেছে এটা তুই কোনটে (কোথায়) পাইছিস আমরাও করবো। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে দেখার জন্য সবাই আসতেছে। আগামী বছর আমি বাড়ির কাছে চাষ করব। এবার তো অল্প করেছি, বাড়ির কাছে এক বিঘা জমি তরমুজ চাষ করব। আমি আশা করছি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মতো লাভ হবে।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, আমি কৃষি কাজ করি। বেগুন, ঢ্যাঁড়স, বরবটিসহ অন্যান্য সবজি চাষ করি কিন্তু সামছুল ভাই যে তরমুজ নিয়ে আসছে এটা কিন্তু আমার চোখে জীবনেও দেখি নাই। আমি দেখছি নিচু মাটিতে তরমুজ হয় এখানে দেখতেছি মাচায়। তা দেখতেছি খুবই ফলন হইছে। আর এখনই একটার তিন থেকে চার কেজি ওজন হবে। আমি সামছুল ভাইকে বলছি ভাই কোথায় থেকে পাইছিস আমি এক বিঘা জমিতে চাষ করব। ভাই নাকি কৃষি অফিস থেকে সব পাইছে। আমিও কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাষ করব। কৃষক দুলাল হোসেন  বলেন, আমাদের এলাকায় নতুন একটা সবজি চাষ হয়েছে, এটা আমরা আগে চাষ করিনি। আমাদের বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ হলেও এই প্রথম তরমুজ চাষ হয়েছে। এলাকায় তরমুজ চাষ হয়েছে বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ দেখতে আসতেছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button