হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ হবে ঢাকার তৃতীয় মেট্রোরেল লাইন (এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুট)। পাতালপথ ও উড়ালপথের সমন্বয়ে নির্মিতব্য এ মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মেট্রোরেল নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হবে প্রায় ২ হাজার ৬২ কোটি টাকা। টাকার বিপরীতে ডলারের সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী (১ ডলারে ১০৮ টাকা ২৫ পয়সা) অনুযায়ী হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেল নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৯ কোটি ৫ লাখ ডলার। গতকালই মেট্রোরেলের একটি প্যাকেজে ঠিকাদার নিযুক্ত করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা আগামী জুলাইয়ে এ মেট্রোর নির্মাণকাজ শুরুর আশা করছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যয় নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছে নির্মাণ, পরিবহন ও অবকাঠামো খাত নিয়ে কাজ করা সংবাদমাধ্যম ‘ফিউচার সাউথইস্ট এশিয়া’। এতে বলা হয়েছে, লাহোর অরেঞ্জ লাইনের কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার। একইভাবে জাকার্তা নর্থ-সাউথের কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় সাড়ে ৭ কোটি ডলার, হো চি মিন সিটি লাইন-১-এর ৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, হ্যানয় লাইন-২-এর ৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, দিল্লি লাইন-১-এর কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ৫ কোটি ৬ লাখ ডলার। উল্লিখিত সব মেট্রোই সংশ্লিষ্ট শহরগুলোর প্রথম। ‘ফিউচার সাউথইস্ট এশিয়া’র বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এশিয়ার ব্যয়বহুল মেট্রোরেলে পরিণত হয়েছে ঢাকার এমআরটি লাইন-৬। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেলের কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। মার্কিন মুদ্রার হিসাবে ১৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার (গতকালের ডলার রেট অনুযায়ী)। উত্তরা-মতিঝিল রুটে চলাচলের জন্য নির্মীয়মাণ দেশের প্রথম এ মেট্রোরেলের পুরোটাই হচ্ছে উড়ালপথে।
এর চেয়েও বেশি ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে ঢাকার দ্বিতীয় মেট্রোরেলটি। বিমানবন্দর-কমলাপুর-পূর্বাচল রুটের জন্য এ মেট্রোরেলের কিলোমিটারপ্রতি নির্মাণ ব্যয় ১৫ কোটি ৫৪ লাখ ডলার (গতকালের ডলার রেট অনুযায়ী)। নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষায় থাকা ঢাকার তৃতীয় মেট্রোরেলের ব্যয় প্রথম দুটিকে অতিক্রম করে গেছে। এতে প্রতি কিলোমিটার নির্মাণে গড়ে খরচ হবে ১৯ কোটি ৫ লাখ ডলার।
প্রতিবেশী ভারতে যেখানে মেট্রোরেলের কিলোমিটারপ্রতি গড় নির্মাণ ব্যয় ৪ থেকে ৬ কোটি টাকা, সেখানে বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার মেট্রো নির্মাণে ১৯ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হওয়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে অভিহিত করেছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক এজন্য দায়ী করছেন মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় কোনো প্রতিযোগিতা না থাকাকে। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জি টু জি পদ্ধতিতে ঋণ নিয়ে। এ পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে ঋণদাতা সংস্থার একটা পরোক্ষ প্রভাব থাকে। দরপত্র প্রক্রিয়া এমনভাবে করা হয়, যাতে কেবল নিদিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই সেটাতে অংশ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়া বলা হলেও দিন শেষে এ প্রক্রিয়াটি আর আন্তর্জাতিক থাকে না, একচেটিয়া হয়ে যায়।’ বাংলাদেশে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে এমনটিই হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।