কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি বলেছেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহী। গতকাল মঙ্গলবার (২৩ মে) দোহায় র্যাফেলস টাওয়ারের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ কথা বলেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, “বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (কাতার) বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চান।” বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনার জন্য শেখ হাসিনার প্রশংসা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ কাতার থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ক্রয় করে। আমরা চাই আপনি জ্বালানি দিয়ে আমাদের সহায়তা করুন।”
জবাবে মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বলেন, তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কাতার বাংলাদেশের জন্য যতটা সম্ভব করবে।
২০২৩ সালের ফিফা বিশ্বকাপের পর কাতারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা সম্পর্কে কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশি কর্মীরা তাদের সম্পদ ও বন্ধু এবং কাতার তাদের যতটা সম্ভব রাখবে।”
পরে কাতারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর অবস্থানস্থলে সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অতিরিক্ত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের বিষয়ে নতুন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
বৈঠকের পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, “শেখ হাসিনা কাতার থেকে বৃহত্তর পরিমাণ জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে বলেছেন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত বিদ্যমান ১৫ বছরের চুক্তিটি ২০৩২ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তবে ২০২৫ সালের পরে বৃহত্তর পরিমাণে জ্বালানি পেতে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।”
ড. মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দরদাম সংক্রান্ত সমস্যা ঠিকঠাক করে অবিলম্বে চুক্তি সই করতে বলেছেন। বাংলাদেশকে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বর্ণনা করে এবং দেশটি দুঃসময়ে কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছিল উল্লেখ করে তারা (কাতার) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তারা কাতারের পক্ষে যত দূর সম্ভব সব ধরনের ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করবে।”
এছাড়া র্যাফেলস টাওয়ারে কাতার ইকোনমিক ফোরামের ফাঁকে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিফিংয়ে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, “বৈঠকে কাগামে শেখ হাসিনাকে বলেন, তিনি সবসময় বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শোনেন এবং তিনি বাংলাদেশ সফর করতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে খুব গর্বিত’।”
রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং আপনি (শেখ হাসিনা) খুব ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করছেন। আমি এটা দেখতে চাই।”
জবাবে প্রধানমন্ত্রী কাগামেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। পল কাগামে বলেন, তিনি বাংলাদেশ ও রুয়ান্ডার মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে চান, বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপন করতে চান।
সম্প্রতি রুয়ান্ডায় একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ফার্মাসিউটিক্যাল কারখানা খোলার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট তার দেশে বিভিন্ন খাতে আরও বাংলাদেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।
শেখ হাসিনা পল কাগামের প্রশংসা করে বলেন, তার ভালো নেতৃত্বের কারণে আফ্রিকায় রুয়ান্ডা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে।
সরকারপ্রধান কাগামেকে বলেন, “ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সমস্যা তৈরি করেছে এবং যা বাংলাদেশ, রুয়ান্ডার মতো দেশগুলোকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। আমরা যদি একে অপরকে সহযোগিতা করি, তবে আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।”
শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রশংসা করে কাগামে বলেন, “সহযোগিতা জোরদার করার এখনই সময়।”