নির্বাচনে অনিয়ম হলে ভোট চলাকালে কিংবা গেজেট প্রকাশের পর পুরো ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়ায় একটি সংশোধনী আনার প্রস্তাব দিয়েছিল ইসি। সেটিতে সায় দেয়নি মন্ত্রিসভা। যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হবে কেবল সেসব কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে- এমন বিধান রেখে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) আইন ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে বিকেলে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
সচিব বলেন, নির্বাচনে পেশী শক্তি বা অন্য কোনো কারণে অনিয়ম হলে এক বা একাধিক কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা নতুন করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট কেন্দ্র বা এক বা একাধিক কেন্দ্র হলে সেখানে এ ক্ষমতা (বাতিল বা স্থগিত) প্রয়োগ করতে পারবে ইসি।
পুরো নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা আইনে আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না। পুরো ইলেকশন বাতিল করার বিষয় আইনে এখন নেই। নির্বাচন কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল মন্ত্রিসভা তা পর্যালোচনা করে যে বিষয়গুলো যৌক্তিক বলে মনে করেছে এবং যে বিষয়গুলো স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সহায়ক বলে মনে করেছে সেগুলো অনুমোদন করে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন বাতিল বা স্থগিতের প্রস্তাব দিয়েছিল, এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো? এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা কী কী প্রস্তাব দিয়েছে তা আমার জানা নেই। এখানে যে বিষয়টা রাখা হয়েছে সেটা হচ্ছে, কোনো নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের যদি মনে হয় যে ওই সেন্টারের নির্বাচনে সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ওই সেন্টারের বা পোলিং স্টেশনের নির্বাচন (এক বা একাধিক যদি হয়) তারা বাতিল বা স্থগিত করতে পারবেন। পোলিং স্টেশনের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, এক বা একাধিক।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাইবান্ধার একটি আসনে পুরো নির্বাচন স্থগিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আইনটি যেভাবে পাস হয়েছে সেটিই বলেছি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছিল অনিয়ম করে কেউ নির্বাচনে জয়ী হলে এবং সেই ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলেও তা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা তখন বলেছিলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতা সংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে।
এদিকে, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় আরও কিছু বিষয় নতুন করে সংযৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যেমন, নির্বাচন চলার সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর কেউ হামলা করলে তাদের সুনির্দিষ্ট শাস্তির আওতায় আনা হবে। আগে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব জেলাভিত্তিক দেওয়া হলেও এখন সংসদীয় আসনভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে প্রভৃতি।
সচিব বলেন, যদি কারো ব্যাংকের পাওনা থাকে বা ঋণ পরিশোধের অসুবিধা থাকে কিংবা কোনো বিল পরিশোধের প্রসঙ্গ থাকে তাহলে মনোনয়নপত্র গ্রহণের সাত দিন আগে ক্লিয়ার হওয়ার কথা ছিল। এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ বা পাওনা পরিশোধ করলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন।
তিনি জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর কেউ যদি রিজেক্ট (বাতিল) হন তাহলে তিনি তখন আপিল করতে পারতেন। এখন শুধু রিজেক্ট না, রিটার্নিং অফিসার যে সিদ্ধান্তই দেন, যদি গ্রহণও করেন তাহলেও আপিল করা যাবে। তার যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। উপযুক্ত কাগজপত্র ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ দাখিল করে আপিল করা যাবে।