সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার (১৪ই মে ২০২৩) বহু প্রত্যাশিত ইজিপ্ট এয়ার প্রথমবারের মতো ঢাকা যাবে। ইতিমধ্যে গত মাসে মিশরের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স ইজিপ্টএয়ার ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি ও পেয়েছে। গত রমজান মাসে মিশরে বিখ্যাত আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র সংগঠন ইত্তেহাদ এর এক ইফতার অনুষ্ঠানে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম ইজিপ্ট এয়ার এর বরাত দিয়ে ঘোষণা করেন যে, আগামী ১৪ই মে ঢাকাগামী সরাসরি ফ্লাইট ইজিপ্ট এয়ার এর টিকেটে ৫০% ছাড় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার দু’দিন পরপরেই ইজিপ্ট এয়ার এর ফেইসবুক ভেরিফাইড পেইজ ও বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৫০% ছাড় দিয়ে টিকেট বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যায়।
প্রথম ফ্লাইটে ৫০% ছাড় এর কথা শুনে অনেক প্রবাসীই ছুটিতে দেশে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু টিকেট কিনতে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অনলাইন ও বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টে গিয়ে টিকেটের যে মূল্য দেখা যায় তাতে বিশেষ ছাড় দেওয়ার কোন কথা উল্লেখ নেই।
রাজধানী কায়রো বিখ্যাত তাহরীর স্কয়ার এর তালাত হা’রব রাস্তার প্রবেশ মুখে সারি সারি ভাবে রয়েছে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট। যারা খুব সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট। ১৪ই মে’র কায়রো -ঢাকা কায়রো টিকেট এর দাম জিজ্ঞেস করলে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেনা বলে জানান তারা।
বাংলাদেশি টিকেট বিক্রেতা শরিফ জানান, ইজিপ্ট এয়ার ছাড় ঘোষণা দেওয়ার পর টিকেটের যে মূল্য আসে, তার চেয়ে অনেক কম মূল্যে আমরা অন্য এয়ার লাইন্সে টিকেট দিতে পারি। আসলে এয়ার লাইন্স ছাড় দিয়েছে শুধু তাদের নির্ধারিত টিকেটের মূল্যর উপর, দুই বিমানবন্দর সহ অন্যান্য ট্যাক্স এর উপর তো এয়ার লাইন্স মূল্য ছাড় দিতে পারে না। তাই টিকেট এর দাম অন্য এয়ার লাইন্সের ছেয়ে কিছুতেই কম নয়।
আল – আজহার শিক্ষার্থী ইয়াহিয়া তানভির বলেন, আমি ঢাকা- কায়রো প্রথম ফ্লাইটের ৩টি টিকেট নিয়েছি। অনওয়ে প্রতি টিকেটের দাম ছিল ১৪৩৬০ ইজিপি, ছাড় দেওয়ার পর প্রতি টিকেটের মূল্য আসছে ১১৬৫৯ ইজিপি, তা হলে ৫০% ছাড় কোথায়?
আরেক বাংলাদেশি টিকেট বিক্রেতা মাকসুদ আজহারী জানান, ইজিপ্ট এয়ার তার টিকেটের ৫০% ছাড় দেওয়ার কথা শুনে অনেকেই আসছিলেন টিকেট কিনতে। কিন্তু আমরা সে রকম কিছু দেখছি না। আমি মাত্র একটি টিকেট বিক্রি করতে পেরেছি। কর্তৃপক্ষ যদি ৫০% ছাড় দিত তাহলে আমি অনেক টিকেট বিক্রি করতে পারতাম।
আজ খুঁজ নিয়ে দেখা যায় কায়রো -ঢাকা- কায়রো ইজিপ্ট এয়ার প্রথম ফ্লাইটের প্রায় সব টিকেট শেষ। কায়রো থেকে ঢাকা যাওয়ার মাত্র ৯ টিকেট অবশিষ্ট আছে, আর ঢাকা থেকে কায়রো ৬টি।
এদিকে গত কয়দিন আগে নিউইয়র্ক এর জ্যাকসন হাইটস্থ এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ইজিপ্ট এয়ার এর বাংলাদেশে জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) আলো ঢাকা এভিয়েশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সৈয়দ আলী সামী অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সাথে তুলনামুলক হ্রাসকৃত ভাড়ায় টিকেট দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ১৩ মে থেকে নিউইয়র্ক- কায়রো – ঢাকা ইজিপ্ট এয়ার ফ্লাইট চালু হচ্ছে। ফ্লাইট চালুর পর থেকে পরবর্তী একমাস প্রতি টিকেট পিছু ৩টি করে লাগেজ নেওয়ার সুযোগ পাবেন যাত্রীরা ।
তিনি বলেন, ঢাকা-কায়রো রুটে আপাতত: সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বুধবার ফ্লাইট চলবে, তবে নিউ ইয়র্ক – কায়রো-নিউ ইয়র্ক রুটে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট রয়েছে। কায়রো -ঢাকা-কায়রো রুটে সর্বাধুনিক ড্রিমলাইনার বিমান ব্যবহার করা হবে।
সামি আরো জানান, ঢাকার সাথে কায়রোর কানেক্টটিং ফ্লাইট শুরু হবে ১৪ মে। আপাতত: কায়রো-ঢাকা ফ্লাইট চলবে সপ্তাহে ২ দিন। নিউ ইয়র্ক থেকে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ঢাকাগামী যাত্রীদের নিয়ে ইজিপ্ট এয়ার আকাশে উড়বে। তবে যাত্রীরা চাইলে কায়রো থেকে ঢাকায় যাওয়া আসার পথে কায়রোতে যাত্রা বিরতি করে পিরামিডসহ কায়রোর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করতে পারেন। তিনি জানান, কায়রোতে ট্রানজিট নেওয়া যাত্রীরা ইজিপ্ট এয়ারের বিশেষায়িত ট্যুর প্যাকেজ – টিকেট পিছু মাত্র ১২০ ডলারের বিনিময়ে ফাইভ স্টার হোটেলে ১ রাত যাপন, বেড এনড ব্রেকফাস্ট, এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত আনা নেয়া, ঐতিহাসিক পিরামিড পরিদর্শনের সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।
২ দিনের ট্রানজিট এর জন্য ব্যয় হবে টিকেট পিছু ২৪০ ডলার। উল্লেখিত সুবিধার সাথে ২য় দিনে যোগ হবে মিশরের বিখ্যাত নীলনদে রিভারক্রুজ ও নৈশভোজ। এছাড়া আগামীতে বাংলাদেশগামী ও বাংলাদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য ওমরাহ প্যাকেজ চালু করা হবে বলেও জানান জনাব সামি।