অর্থনীতিহাইলাইটস

ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হচ্ছে আজ

দাম নিয়ে সন্তুষ্ট নন কৃষক

95আজ সারা দেশে শুরু হচ্ছে সরকারিভাবে বোরো মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। কৃষকরা জানিয়েছেন, আমনের পর এ বছর বোরো মৌসুমেও সন্তোষজনক ফলন হয়েছে। এবারের বোরো মৌসুমে আমনের চেয়ে দাম কেজিপ্রতি ২ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা এবং চালের দাম ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবে সরকারিভাবে ধানের নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক বরাবরই খাদ্যগুদামে চাল বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এছাড়া চালকল মালিকরাও নির্ধারিত দামে সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে চান না। ফলে এ মৌসুমেও ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বোরো মৌসুমে চার লাখ টন ধান, সাড়ে ১২ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে কেনা হবে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। গত বোরো মৌসুমে ধান, চাল ও গমের দাম ছিল যথাক্রমে ২৭, ৪০ ও ২৮ টাকা। আর গত আমন মৌসুমে কেজিপ্রতি ধান ২৮ ও চাল ৪১ টাকায় কিনেছিল সরকার।

চলতি বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে রংপুর বিভাগ থেকে। এ অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ৬৫ হাজার ৯৮৪ টন ধান ও ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৩৪ টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগ থেকে ৬৫ হাজার ৮১৭ টন ধান ও ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৮ টন চাল, ঢাকা থেকে ৫৮ হাজার ৮৫০ টন ধান ও ১ লাখ ২৫ হাজার ১৪৮ টন চাল, খুলনা থেকে ৫১ হাজার ৬৮৪ টন ধান ও ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টন চাল, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ৫০ হাজার ৭২ টন ধান ও ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬৪ টন চাল, সিলেট থেকে ৩৫ হাজার ৫৩৬ টন ধান ও ৪৪ হাজার ৪৫৬ টন চাল, বরিশাল থেকে ১৬ হাজার ২৩১ টন ধান ও ২৮ হাজার ৫০০ টন চাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ৫৫ হাজার ৮২৬ টন ধান ও ২ লাখ ৮ হাজার ৯০০ টন চাল সংগ্রহ করা হবে।

সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে রংপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বরিশাল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার প্রাপ্ত বরাদ্দের কমপক্ষে ৫ শতাংশ এবং ভোলা থেকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জিংকসমৃদ্ধ ধান (ব্রি-৭৪) সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া সংগৃহীত জিংকসমৃদ্ধ ধান পৃথকভাবে খামারজাত ও ক্রাশিংয়ের পর চাল সংরক্ষণ করতে হবে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় ধান কাটা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেষ হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে বোরো মৌসুমে ধান আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরভুক্ত সাত জেলায় ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৭ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে, যার ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর হাওরে এবং পাঁচ লাখ হেক্টর হাওরের বাইরে রয়েছে। এরই মধ্যে হাওরের ৯২ শতাংশের বেশি ধান কাটা হয়েছে। পাশাপাশি দেশের মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৩৩ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আর মোট ফলন হয়েছে ৭০ লাখ টন।

বিভিন্ন জেলায় কৃষক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে খোলাবাজারে ধান বিক্রি করছেন। গুদামের চাহিদা অনুযায়ী ধান প্রস্তুত করতে গেলে প্রতি মণে আরো ৫-৭ কেজি কমে যায় বলে জানান কৃষকরা। এছাড়া সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে বাড়তি পরিবহন খরচ, বিক্রয়ে অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ নানা প্রক্রিয়াগত জটিলতায় পড়তে হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

গতকাল নওগাঁর মান্দা উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ও মহাদেবপুর উপজেলা সদর হাটে মানভেদে প্রতি মণ জিরাশাইল ধান ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৪২০ টাকা, কাটারি ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩৯০ এবং ব্রি ধান-৯০ ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৪৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সুভলতা ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ২২০ এবং হাইব্রিড ৯৬০ থেকে ১ হাজার ১০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চকবুলাকী গ্রামের কৃষক এমরান হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সদ্য কাটা প্রতি মণ ধান এখন ১ হাজার ২৫০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ধান সরকারি গুদামে দিতে গেলে শুকানো ও পরিষ্কার করতেই প্রতি মণে কমপক্ষে পাঁচ-সাত কেজি ধান কম হবে। আবার গুদাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাড়তি গাড়ি ভাড়া ও শ্রমিক খরচ তো আছেই। সে হিসেবে সরকার নির্ধারিত ধানের দাম অনেক কম। এর চেয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করাই আমাদের জন্য লাভ ও সুবিধাজনক।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button