জলবায়ু পরিবর্তনহাইলাইটস

বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ কমাতে কাজ করবে জি৭

উত্তর জাপানের সাপ্পোরো শহরে জি৭ মন্ত্রীদের বৈঠকের আগ মুহূর্তে ছবি: এপি
উত্তর জাপানের সাপ্পোরো শহরে জি৭ মন্ত্রীদের বৈঠকের আগ মুহূর্তে ছবি: এপি

বৈশ্বিক জলবায়ুর বিপর্যয় ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায়ী কার্বন নিঃসরণ। অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন নিঃসরণের ফলে সরাসরি প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। কখনো তীব্র খরা, কখনো প্রচুর বৃষ্টিপাত, আবার দাবানলে পুড়ে যাচ্ছে বনাঞ্চল। এ অবস্থায় বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে জি৭-ভুক্ত দেশগুলো। সাত উন্নত অর্থনীতির গ্রুপটির (জি৭) জ্বালানি ও পরিবেশ মন্ত্রীরা গতকাল উত্তর জাপানের সাপ্পোরো শহরে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বাজে পরিণতি এড়াতে কার্বন নিঃসরণ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এসব নেতা। একই সঙ্গে পরিবেশকে ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন তারা। খবর এপি ও রয়টার্স।

প্রতিবেদন বলছে, এ বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে মে মাসে হিরোশিমায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের আগে সবচেয়ে কার্যকর উপায় সম্পর্কে একমত হওয়া। সাপ্পোরোর পরিবেশ ও জ্বালানিবিষয়ক সম্মেলনটির উদ্বোধনী বক্তৃতায় জাপানের অর্থনীতি ও বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা বলেন, ‘ভারী শিল্প-কারখানাকে কার্বনমুক্ত করতে পর্যাপ্ত অর্থায়ন করতে হবে। পাশাপাশি উদীয়মান দেশগুলোকে নিঃসরণ কমাতেও জি৭-এর সদস্যদের পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে নিশিমুরা বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি। একই সঙ্গে জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জনের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আমরা জি-৭, শুধু আমাদের নিজস্ব নিঃসরণ কমাতে চাই না, বরং বৈশ্বিক নিঃসরণ কমানোর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।’ এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক প্রতিনিধি জন কেরি বলেন, ‘জি৭ বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। আমরা জাপানের নেতৃত্ব এবং এ বছর জি৭-এর পরিচালনার প্রশংসা করছি।’

যদিও কার্বন নিঃসরণ কীভাবে এবং কত দ্রুত বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে মতপার্থক্য অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগকে গভীর করেছে। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণসংক্রান্ত প্রচেষ্টাকে আরো জটিল করে তুলেছে।

সাপ্পোরোর আলোচনায় জীববৈচিত্র্য হ্রাস এবং অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বন্ধ করাই এ বৈঠকের শীর্ষ আলোচিত বিষয়। এছাড়া গত বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি৭ শীর্ষ সম্মেলনেও কার্বন নিঃসরণসংক্রান্ত বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। ওই সময়ে জোটটি ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ বা অধিকাংশ কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে জাপানের তথাকথিত পরিবেশবান্ধব কয়লা, হাইড্রোজেন এবং পারমাণবিক জ্বালানিসংক্রান্ত কৌশলকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে অন্যান্য দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে দ্রুত রূপান্তরের বিষয়ে জোর দিচ্ছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস নতুন জীবাশ্ম জ্বালানির অনুসন্ধান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তথ্য বলছে, জি৭ দেশগুলোর মধ্যে নিঃসরণ কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ইউরোপে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী নিঃসরণ এখনো বাড়ছে। ভারত ও চীনের মতো বড় ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোতে এ মাত্রা আশঙ্কাজনক।

বৈঠকের আগের দিন এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী জেনিফার গ্রানহোম বলেন, ‘জি-৭ দেশগুলো জলবায়ু নিঃসরণ মোকাবেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই দেশগুলো দেখবে যে এটা সম্ভব। যেসব দেশ এ খাতটিতে প্রথম বিনিযোগ করবে তারা অন্যদের এ বিষয়ে উৎসাহিত করতে সহায়ক হবে।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button