অর্থনীতিহাইলাইটস

বিশ্ববাজারে ইউরিয়ার ৬২% ডিএপির ২৪%, টিএসপির ২৫ শতাংশ দাম কমেছে

585রাসায়নিক সারের চাহিদা পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ। দেশে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—এ চার ধরনের সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চারটির দামই এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কমতির দিকে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের চলতি মাসে হালনাগাদকৃত পিংক শিটের (আন্তর্জাতিক বাজারসংক্রান্ত নিয়মিত প্রতিবেদন) তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক বছরে ইউরিয়া সারের দাম কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। একই সময়ে ডিএপির মূল্যহ্রাস হয়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। টিএসপি ও এমওপির দাম কমেছে যথাক্রমে প্রায় ২৫ ও ৪৭ শতাংশ।

কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি আগামী অর্থবছরের সারের সম্ভাব্য চাহিদার প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে দেশে সারের মোট চাহিদা হবে প্রায় ৬৮ লাখ টন। এর মধ্যে প্রায় ৮৭ শতাংশই ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি। সবচেয়ে বেশি চাহিদা ইউরিয়া সারের। আসন্ন অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা নিরূপণ হয়েছে প্রায় ২৭ লাখ টন, যা রাসায়নিক সারে নির্ধারিত মোট চাহিদার ৩৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) আন্তর্জাতিক বাজারে সবচেয়ে বেশি মূল্য বৃদ্ধি পায় ইউরিয়ার। ওই সময় প্রতি টনের গড় মূল্য ৮২১ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। তবে এর পর থেকেই দাম কমতির দিকে রয়েছে। পরের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সারের মূল্য নেমে আসে ৭৭৪ ডলার ২০ সেন্টে। এরপর কমতে কমতে গত মার্চে প্রতি টনের গড় মূল্য দাঁড়ায় ৩১৩ ডলার ৫০ সেন্টে। সে অনুযায়ী অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়ার দাম ৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ কমেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ইউরিয়া ও এমওপি সারের দাম অর্ধেকের বেশি বা কাছাকাছি নেমে আসার বিষয়টি স্বীকার করছেন সার আমদানিকারকরা। বেসরকারি খাতের সার আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীদের সংগঠক বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে মে মাসে দরপত্র হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে যে মূল্য থাকে তার ওপর ভিত্তি করেই আমদানি করতে হয়। দরপত্রের সাতদিনের মধ্যে এলসি খুলতে হয়। গত বছরের চেয়ে এখন সারের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। আগামী মে মাসে আবার দরপত্র দেয়া হলে অনেক কমে সার আমদানি করা যাবে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে বিশ্ববাজারে সারের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। মে মাস ধরেই মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। বিএডিসির মাধ্যমে সারা বছরই আমদানি করা যায়। যখন যে দাম থাকে সে দাম অনুযায়ী তখন আমদানি করা যায়। আর ইউরিয়া পুরোটাই বিসিআইসির মাধ্যমে আমদানি করা হয়। বিসিআইসি ও বিএডিসি বছরের যেকোনো সময় আমদানি করতে পারে।’

দেশে ডিএপি সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ লাখ টন। সে হিসেবে মোট চাহিদার ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ ডিএপি সার। আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি টন ডিএপি সারের দাম ছিল ৭৯৪ ডলার ৯০ সেন্ট। এর পরের প্রান্তিকে মূল্য আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬০ ডলার ১০ সেন্টে। তবে এর পর থেকেই ডিএপির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমতির দিকে রয়েছে। গত মাসে বিশ্ববাজারে ডিএপি সারের গড় মূল্য নেমে এসেছে ৬০৬ ডলারে। সে অনুযায়ী এক বছরে ডিএপির দাম কমেছে ২৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

দেশে টিএসপির চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টন, যা আগামী অর্থবছরে রাসায়নিক সারের মোট চাহিদার প্রায় ১১ শতাংশ। বিশ্ববাজারে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি টন টিএসপির গড় দাম ছিল ৭১৫ ডলার ৬০ সেন্ট। পরের প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০৪ ডলার ৫০ সেন্টে। এর পর থেকে তা কমতে কমতে গত মাসে নেমে আসে ৫৩৭ ডলার ৫০ সেন্টে। সে অনুযায়ী এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে টিএসপির দাম ২৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমেছে।

দেশে এমওপির চাহিদা রয়েছে ৯ লাখ ৩০ হাজার টনের, যা মোট চাহিদার ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিশ্ববাজারে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি টন এমওপির মূল্য ছিল ৮৫১ ডলার ৭০ সেন্ট। এর পরের প্রান্তিকে এ মূল্য বেড়ে ১ হাজার ১৫৮ ডলার হয়ে যায়। এর পর থেকে কমে গত মার্চে প্রতি টন এমওপির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৫৩ ডলারে। অর্থাৎ এমওপির ক্ষেত্রে এক বছরে দাম কমেছে ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ৪১৪ টন। এছাড়া টিএসপি ৩৭ হাজার ১৪২ টন, ডিএপি ৭১ হাজার ৬৯৫ টন ও এমওপির মজুদ রয়েছে ২৫ হাজার ৫২৪ টন। গত বছরের একই সময়ে ইউরিয়া ১ লাখ ১৩ হাজার ১৯৯ টন, টিএসপি ৩২ হাজার ৬৯১, ডিএপি ৬৯ হাজার ৮৩৪ ও এমওপি ১৮ হাজার ১৮ টন মজুদ ছিল।

দেশের আমদানীকৃত সারের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। গত বছর দেশের সর্ববৃহৎ এ ব্যাংকটি প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের সার আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলে। আমদানীকৃত ওইসব সার এখন বিতরণ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা।  তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের সার আমদানির এলসি খুলেছি। এখন ওইসব এলসির দায় সমন্বয় হচ্ছে। তবে চলতি বছর এখন পর্যন্ত সার আমদানির জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাইনি। গত বছর বিশ্ববাজারে সারের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম কমে এলে বাংলাদেশেরও উপকৃত হওয়ার কথা।’

উল্লিখিত চার ধরনের বাইরেও আরো কয়েক ধরনের রাসায়নিক সার দেশের কৃষকরা ব্যবহার করে থাকেন। তবে প্রধান চারটির তুলনায় এগুলোর ব্যবহার একেবারেই সামান্য। ডিএইর তথ্য অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে এসব সারের মধ্যে এনপিকেএস ৩০ হাজার টন, জিপসাম সাড়ে ৫ লাখ, জিংক সালফেট ১ লাখ ৪০ হাজার, অ্যামোনিয়াম সালফেট ২ হাজার ৫০০, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ৯০ হাজার ও বোরন সার ৫০ হাজার টনের প্রয়োজন পড়বে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button