যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ কথা বলেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। আজ মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর দেশের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। এই অঞ্চল ও সারা বিশ্বের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়, তা নিশ্চিতের বিষয়ে সবার মনোযোগ রয়েছে।
দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল মোমেন জানান, যে বিষয়গুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। একটা মডেল নির্বাচন করতে হবে। আমি বলেছি, অবশ্যই। এটা আমাদেরও উদ্দেশ্য। আমরাও একটি মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে। এটা করার জন্য আমরা ছবি সংবলিত আইডি তৈরি করেছি, যাতে ফেইক (জাল) ভোট না হয়। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করেছি। আমরা আশা করছি, এই কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। তবে নির্বাচন একা একা হয় না। আমরা নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক চাই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু সরকার করতে পারবে না। এজন্য সব বিরোধীদলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অঙ্গীকার করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে লোক মারা যায়। আমরা চাই না একটা লোক মারা যাক। তবে আমরা খুব ইগোস্টিক, এত উদ্বেলিত হই যে; লোক মাইরা ফেলি। আমরা চাচ্ছি, নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের একটা লোকও যেন না মারা যায়। আমরা পরিবেশ তৈরি করেছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে। এতে অন্য লোকদেরও সাহায্য করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, তিনি আগামী নির্বাচনে মার্কিন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানান। তবে দেশটিতে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে পর্যবেক্ষক হতে পারবে না।
ড. মোমেন বলেন, ‘আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি—অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হলে আমরা অবশ্যই নির্বাচনে জিতে আসব। এজন্য সব দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ), গণমাধ্যম এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি—ডিএসএ করেছি, কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য তা করিনি। আওয়ামী লীগ গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। আমাদের দেশে ১ হাজার ২৫১টি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ৪৩টি প্রাইভেট টিভি নেটওয়ার্ক আছে। আমরা কোনো কিছু খর্ব করি না। আমাদের দেশে বিরোধীদল যখন–তখন বিক্ষোভ করতে পারে।’
ড. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘একমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তি কেউ ধ্বংস করলে আমরা তাকে শাস্তি দিই। সরকারের এ বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ জনজীবন বিঘ্নিত করতে পারে না।’
মানবাধিকারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে কয়েকজন লোকের বিষয়ে ন্যায়বিচার করার জন্য। তখন বলেছি, আমরা অবশ্যই ন্যায়বিচার করব। কারণ, আমরা আইনের শাসন ও সুশাসন চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জানান, বৈঠকে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি, ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষা, ব্যবসা–বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দেওয়াসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছিল।