মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী দিঘিরপার বাজারে প্রতি শুক্রবার হাটে এক কোটি টাকার বেশি মরিচ বিক্রি হয়। এক হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হয় এ হাটে। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকাররা এই বাজার থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান। পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই হাটটিতে মুন্সীগঞ্জ ও তার পাশের শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, চাদঁপুর জেলার মরিচ চাষিরা মরিচ নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এই মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ওই বাজারে গড়ে উঠছে অর্ধশতাধিক আড়ত। ওই আড়তগুলো প্রতি শুক্র ও সোমবার এলেই মরিচ কেনাবেচার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রতি হাটে ১ হাজার মণের বেশি মরিচ বিক্রি হয়।
শত বছরের অধিক পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই হাটটি কয়েকবার পদ্মায় বিলীনের পরেও পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। এই হাটের পাশের মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, চাদঁপুর অঞ্চলের পদ্মার চরাঞ্চলগুলোতেও ব্যাপক আকারে মরিচ চাষ হয়। মরিচের ফলন এ সমস্ত চরে ভালো হলেও এ বছর শীত মৌসুমে একেবারে বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন অনেক কম হয়েছে বলে জানালেন মরিচ চাষিরা। তাছাড়া শীতকালে কাঁচামরিচের দাম বাড়ায় অনেক চাষি কাঁচামরিচ জমি থেকে তুলে বিক্রি করে ফেলেছেন তাই এই মৌসুমে পাকা মরিচ জমিতে কম পাচ্ছেন চাষিরা। তবে মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সরেজমিনে ওই হাটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাট। প্রতি কেজি শুকনো মরিচ ২৫০ হতে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মরিচ বিক্রি করতে আসা কতিপয় মরিচ চাষি বলেন, এ বছর বর্ষার শেষ, মৌসুমী ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে মরিচ চাষ বিলম্ব হয়েছে। তাই কুয়াশায় একদিকে যেমন মরিচের ক্ষতি হয়েছে অন্যদিকে শীত মৌসুমে একেবারে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় উৎপাদন হয়েছে অনেক কম। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় মরিচ উৎপাদন হয়েছে অর্ধেক। তবে মরিচের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেকটা ভালো।
টঙ্গীবাড়ির দিঘিরপার এলাকার মরিচ চাষি আলী আহমেদ বলেন, এককানি (১৬০ শতাংশ) জমিতে মরিচ লাগাইছি। ৪০ মণের মতো মরিচ হবে। কিন্তু ভালো ফলন হইলে ৭০ মণের উপর হইতো। এবার মরিচ ভালো হয় নাই। গত কয়েক দিন আগে শিলাবৃষ্টিতে অনেক মরিচ নষ্ট করে ফেলছে। আরেক চাষি জিয়া শিকদার বলেন, এবার মরিচ হইছে কম। তাবে দাম বেশ ভালো। ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
শরীয়তপুর জেলার চর আতরা এলাকার চাষি শুকুর আলী মাঝি বলেন, এ বছর বর্ষার শেষ সময় বন্যা হয়েছে। মরিচ দেরিতে রোপণ করতে হয়েছে। যার কারণে ফলন কম হয়েছে। কুয়াশায় নষ্ট হয়েছে। শীতকালে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয়নি তাই ফলন কম হইছে। এ বছর আমার ৮০ শতাংশ জমিতে ২০ মণ হবে। গত বছর ৪০ মণ হয়েছিল।
দিঘীরপাড় বাজারের ব্যবসায়ী আনিছ হালদার বলেন, এবার শীত মৌসুমে কাঁচামরিচের দাম বেশি ছিল। তাই কৃষক কাঁচামরিচ জমি থেকে তুলে বিক্রি করে ফেলেছে। তাই জমিতে পাকা মরিচের সংখ্যা কমেছে। আর মরিচ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওই হাটের আড়ৎদার মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক শামসুল ইসলাম বলেন, প্রতি হাটে আমার আড়তে প্রায় ১০ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি হয়। শুক্রবার ও সোমবার হাট বসে। এ বছর প্রতি হাটে আমার আড়তে ৭০/ ৮০ মণ মরিচ আসে। অন্যান্য বছর এ সময় ১০০ থেকে ১৫০ মণ মরিচ আমার আড়তে বিক্রি হতো। কারণ এ বছর উৎপাদন অনেক কম হয়েছে যদিও দাম কিছুটা বেশি।
বাজারের অপর ব্যবসায়ী অনিক হাওলাদার বলেন, আমাদের বাজারে প্রায় ৫০টি মরিচের আড়ত রয়েছে। প্রতি হাটে এই সমস্ত আড়তগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি মরিচ বিক্রি হয়। বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিজুল মোল্লা বলেন, এ হাটে অন্যান্য বছর প্রতি হাটে তিন থেকে চার কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হতো। এবার মরিচের উৎপাদন কম। তাই কোনো হাটে এক কোটি কোনো হাটে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি হয়েছে। এই বাজারে মরিচের আড়তগুলোতে আশপাশের বিভিন্ন জেলার ৮টি উপজেলা থেকে এই সমস্ত মরিচ এসে থাকে।