রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্মদিন আজ
‘আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,/ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…/এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?/ বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে/মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ’—কথাগুলো লিখেছেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি। যিনি তাঁর গীতিকবিতায় বলেছেন—‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।’ বাংলার কোটি মানুষের মনে দাগ কেটে আছে পঙক্তিগুলো। তিনি আর কেউ নন, তারুণ্য ও সংগ্রামের প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। আজ রোববার তাঁর ৬৬তম জন্মবার্ষিকী।
১৯৫৬ সালের এই দিনে বরিশাল আমানত গঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠাখালীর সাহেবের মাঠ গ্রামে। বাবার নাম ডা. শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম।
দিনটি স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ আজ রোববার বাগেরহাটের মিঠাখালীতে সকালে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রা করে কবিপ্রেমিরা তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে মিলাদ মাহফিল, দোয়া এবং স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া সন্ধ্যায় রুদ্র স্মৃতি সংসদ মিঠাখালী বাজারে জন্মদিনের কেক কাটা এবং রুদ্রের গান ও কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করেছে।
রুদ্রের জন্মবার্ষিকী একযোগে পালন করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নাগরিক সমাজ, প্রথম আলো বন্ধুসভা, মিঠাখালী বাজার বণিক সমিতি, মোংলা সাহিত্য পরিষদ, মোংলা কবিতা পরিষদ, শিরিয়া বেগম মধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
অকাল প্রয়াত এই কবি তাঁর কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর বিভিন্ন পঙক্তিতে করেছেন সাহসী উচ্চারণ। বলেছেন—‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন।’ এই নির্মম সত্য বলার পাশাপাশি ব্যক্ত করেছেন দৃঢ় প্রত্যয়, উচ্চারণ করেছেন—‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই।’
অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান কবিকে করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’। একইসঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা।
১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কবি চলে যান না ফেরার দেশে। এই ৩৫ বছরের জীবনে কবি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং অর্ধশতাধিক গান রচনা করেছেন।
‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটির জন্য রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।
‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দুই বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার’ লাভ করেন।