পুরনো ফিল্মের রিল কি ডিজিটাল যুগেও নিরাপদ থাকবে?
এ বছর গ্রীষ্মকাল শুরু হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্ট্রিমিং সার্ভিস এইচবিও ম্যাক্সের সাবস্ক্রাইবাররা একটি উদ্বেগজনক বিষয় আবিষ্কার করেন। তারা দেখে কভিডের থিমভিত্তিক লকডাউন ও সম্প্রতি রিমেক করা দ্য উইচেসের মতো বেশকিছু সিনেমা এ প্লাটফর্ম থেকে আকস্মিকভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর পেছনে কাজ করেছে নানা কারণ ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কিছু নীতি। এ ধরনের স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো থেকে কালচারাল কমনকে ছড়িয়ে দেয়ার পরিবর্তে বরং সংকুচিত করছে বলে দাবি করছিলেন অনেকে। সিনেমা সরিয়ে ফেলার এ ঘটনা তাদের ধারণাকে সত্য বলে প্রমাণ করেছে। এর আগে নেটফ্লিক্সও স্ট্রেঞ্জার থিংসের পুরনো পর্বগুলো সম্পাদনা করতে শুরু করেছিল। অর্থাৎ পুরনো সেই কাজগুলো আর পাওয়া যাবে না। ফিরে পাওয়া যাবে না শুরুর সেই পর্বগুলো।
নেটফ্লিক্স পর্ব সরিয়েছে আর পুরনো সিনেমার ক্ষেত্রে ফিল্মের রিল নষ্ট হয়ে হারিয়ে যায় সিনেমা। এ ধরনের সমস্যাগুলোর নিরাময় কী তা এখনো সুস্পষ্ট হয়নি। ব্লু-রে ডিস্ক নির্মাতারা অবশ্য দাবি করেন, তাদের ডিস্কগুলো ১০০ বছরেও নষ্ট হবে না। বিষয়টি যদিও স্টোরেজ কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে বলা হয় সেখানে প্লেব্যাক যন্ত্রপাতির ধারাবাহিক সহজলভ্যতার কথা বলা হয়নি। এর মধ্যে ডিভিডি অনেক কম কার্যকরী বলে প্রমাণ হয়েছে। কেননা ডিভিডিতে প্রকাশ পাওয়া অনেক ফিল্মের গুণমান এরই মধ্যে খারাপ হতে শুরু করেছে।
সিনেমার ডিভিডি যদি কারো শোকেসের দেখানোর বস্তুই হয় এবং তা সারা জীবন মোড়কে বদ্ধ রাখা হয়, তাহলে অনেক বছর পরে অপটিক্যাল মিডিয়া ফরম্যাটটি ঠিক থাকবে কিনা তা ভাবনার বিষয়। ডিজিটাল মুভি প্লাটফর্মে কেনা যেকোনো মুভিও বেশ অনিরাপদ। কারণ একজন ব্যক্তি তার দেশে বসে আইটিউনস থেকে মুভিটি হয়তো ক্রয় করেছে, কিন্তু দেশ পরিবর্তন করলেই ভিন্ন রকমের স্বত্বের কারণে মুভিটি হারিয়ে যেতে পারে কিংবা নতুন দেশে পুনরায় তা ডাউনলোড করতে হতে পারে। এভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে মুভি কেনা শিল্পের পণ্যায়নে সম্পূর্ণ নতুন একটি দিক। সম্প্রতি একটি ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তি কানাডা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ায় তার অ্যাপলে ডাউনলোড করা সিনেমা কারস টুর অ্যাকসেস হারিয়ে ফেলে বিষয়টি টুইটারে পোস্ট দেয়। তা দেখে অ্যাপল পরে নিশ্চিত করে, যারা আইটিউনে মুভি ডাউনলোড করেছেন, ঠিকানা পরিবর্তনেও তারা সেসব মুভিতে অ্যাকসেস করতে পারবেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, রিল, সিডি কিংবা ডিজিটাল ফরম্যাট কোনো মাধ্যমেই সিনেমা সংরক্ষণ করা নিরাপদ নয়। এমনকি কেউ যদি তার প্রিয় ফিল্মের ডিআরএম ফ্রি কপি পায়, তবু তাকে ফিল্মের ফরম্যাট নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হবে। সঙ্গে থাকবে ইলেকট্রনিক তথ্য স্বত্ব বেহাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা।
এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে ফিল্মের কিছু অংশ বা পুরো ফিল্মই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যেমন ট্যাক্স রিট-অফ হিসেবে চ্যার্লি চ্যাপলিন নিজের ছবি আ উইম্যান অব দ্য সি (১৯২৬)-এর নেগেটিভ কপি পুড়িয়ে ফেলেছেন। একই কারণে ওয়ার্নার ব্রোস তাদের মুক্তি না পাওয়া ব্যাটগার্ল সিনেমাটি শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এর বাইরে নানা কারণে, এমনকি অজান্তে অবহেলায় অনেক ছবিই হারিয়ে গিয়েছে। ১৯৩৭ সালে সংঘটিত তাপদাহের ফলে নিউ জার্সিতে ফিক্স ফিল্মের ভল্ট পুরোটা পুড়ে সেখানে থাকা অধিকাংশ ফিল্ম নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
তাই বিভিন্ন সময়ে সিনেমার স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকে চিন্তাভাবনা করেছেন। ফলে পুরনো ফিল্মের রিল ডিজিটাল যুগেও নিরাপদ থাকবে কিনা সে প্রশ্নটি উঠেছে। ফলে এর স্থায়িত্ব বাড়ানোর কিছু উপায় বিশেষজ্ঞরা বাতলে দিয়েছেন। যেমন
১. ফিল্মের ডিভিডি ও ব্লু-রে কপিগুলো ১৮-২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২০-৫০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় সংরক্ষণ করা।
২. একটি ফিল্মের ডিজিটাল ডাটাগুলো কয়েকটি স্থানে সংরক্ষণ করা। বিটটরেন্ট মূলত এ উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে।
৩. নিজস্ব ফিল্ম প্রিন্ট তৈরি করা।