অর্থনীতিহাইলাইটস

বাংলাদেশে ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে হিরানান্দানি

5825আগামী দুই বছরে বাংলাদেশে ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ভারতীয় কনগ্লোমারেট হিরানান্দানি গ্রুপ অব কোম্পানিজ। বাংলাদেশে তিনটি প্রকল্পে এ বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি। এর মধ্যে একটি হলো মোংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। অন্য দুটি হলো ভারত থেকে গ্যাস আমদানির জন্য পাইপলাইন স্থাপন এবং কালিয়াকৈরে ডাটা সেন্টার স্থাপন। গতকাল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ফোরামের আলোচনা শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দর্শন হিরানান্দানি।

এসব বিষয়ে দর্শন হিরানান্দানি বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের গ্রুপ বর্তমানে বাংলাদেশে তিনটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটি হলো মোংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে এটি আমরা যৌথভাবে করছি। এটির নির্মাণ শিগগিরই শুরু করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে ভারতীয় অনেক প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে এ ব্যবসায়ী বলেন, বিপরীতে অনেক বাংলাদেশী কোম্পানিরও আগ্রহ রয়েছে। ভারতে আমরা বিশ্বের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা দিই, যারা উৎপাদনমুখী শিল্পপার্ক গড়তে আগ্রহী। আমাদের কাছে তাদের সবার আগ্রহের বিষয়টি জানা আছে। ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় মোংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি নির্মাণে বেশকিছু কাজ এগিয়েছে। আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যে আমরা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করতে পারব। এটা হয়ে গেলে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানকে জমির প্রস্তাব দিতে পারব। আমরা অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছি। ভারতের অনেক কোম্পানি আছে যারা ওই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহী। অর্থাৎ আমাদের বিনিয়োগের বহু গুণিতক প্রভাব দেখা যাবে।

অন্য প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে দর্শন হিরানান্দানি জানান, গ্যাস পাইপলাইনের কাজ চলমান। অধিগ্রহণের কাজ সফলভাবে এগোচ্ছে। কলকাতা থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। সেখান থেকে খুলনা পর্যন্ত যাবে। এ কাজে জিটিসিএলও সম্পৃক্ত রয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থার মাধ্যমে দুই দেশই উপকৃত হতে পারে। বাংলাদেশ যদি আমদানিনির্ভর গ্যাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তাহলে প্রকল্পটি কাজে লাগাতে পারবে। এ সঞ্চালন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস পেতে পারবে।

ডাটা সেন্টারের জন্য এরই মধ্যে জমি ইজারা নেয়া হয়েছে জানিয়ে দর্শন হিরানান্দানি বলেন, আশা করছি ছয় মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারব। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে ঢাকায় প্রথম ডাটা সেন্টারটি চালু করা। প্রাথমিকভাবে আমরা একটি ডাটা সেন্টার দিয়ে কাজ শুরু করব। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য তিনটি প্রকল্পে আমরা ৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছি।

বাংলাদেশে ব্যবসার প্রতিযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা নিয়ে আমাদের কোনো অস্বস্তি নেই। ভারতে আমরা প্রতিযোগিতার মধ্যেই স্বস্তি নিয়ে ব্যবসা করি। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপে ব্যবসার ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে, আমরা প্রতিযোগিতা নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। বাংলাদেশে ব্যবসার জন্য ৫০ বছরের অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া অন্যান্য সবার সঙ্গে আমাদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে।

অন্যদিকে ভারতীয় আরেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আভাদা বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আভাদা গ্রুপের চেয়ারম্যান ভিনীত মিত্তাল বলেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই আমদানিনির্ভর। চলতি বছর জ্বালানি মূল্যের দারুণ ওঠানামা দেখা গিয়েছে, যার কারণে ঘাটতি বেড়েছে। এ মুহূর্তে জ্বালানি মূল্যে স্থিতিশীলতা আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারত জ্বালানি সহযোগিতা কাজে আসতে পারে। ভারত সরকারের সোলার এনার্জি করপোরেশন অব ইন্ডিয়া নামে একটি সংস্থা আছে। যেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ সর্বনিম্ন মূল্যের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ২৫ বছরের জন্য সরবরাহ করতে সক্ষম। এর সুবিধা পেতে বাংলাদেশ সোলার এনার্জি করপোরেশনের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে অংশীদার হতে পারে। এ অংশীদারত্বকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ভারতের সব পরিবেশবান্ধব জ্বালানি শিল্পে প্রবেশ করতে পারে। এর মাধ্যমে নানাভাবে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে। যেমন ভারতীয় রুপি ও বাংলাদেশী টাকার মাধ্যমে মুদ্রা বিনিময় হতে পারে। আবার ২৫ বছরের জন্য কম মূল্যের জ্বালানি নিশ্চয়তাও তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য নতুন ক্ষেত্র কোনটি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ভিনীত মিত্তাল বলেন, উপকূলীয় বাতাসের ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ব্যাপক। এটা অনেক বড় শিল্প।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button