দেশে রফতানি সূচকের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩০ কোটি ডলার। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৪৬০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি। গত বছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিয়মিত রফতানি পরিসংখ্যান হালনাগাদ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। গতকাল সংস্থাটির প্রকাশিত আগস্ট সংস্করণ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
গত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে ৩৯৮ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) রফতানি বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ। প্রতিবারের মতো এবারো রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে পোশাক খাত। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রফতানি হয়েছে ৩৩৬ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলারের পোশাক পণ্য, যা মোট রফতানির ৮৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় এ বছর এ খাতের পণ্য রফতানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ শুধু পোশাক খাতেই এ দুই মাসে রফতানি বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে মোট রফতানি হয়েছে ৮৫৯ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে পোশাক খাতে রফতানি হয়েছে ৭১১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, গত বছর কভিডের প্রভাব ছিল। সে জন্য প্রবৃদ্ধি কম ছিল। যেহেতু মহামারীর প্রভাব কমেছে, তাই গত বছরের তুলনায় এখন স্বাভাবিকভাবেই রফতানি বেড়েছে। কিন্তু জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যে পরিমাণ প্রবৃদ্ধি ছিল, সে তুলনায় কিছুটা এখন কমেছে। অনেক বড় কোম্পানি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। এর প্রভাব টের পাওয়া যাবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে। যুদ্ধসহ নানা কারণে ইউরোপের বাজার এখন বেশ মন্দা। তাই আমরা এশিয়ায় বিকল্প বাজার খুঁজছি।
অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পাঁচ পণ্যের মধ্যে পোশাক ছাড়াও রয়েছে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিপণ্য। মোট রফতানির ৯০ শতাংশই হয় এ পাঁচ পণ্য। জুলাই ও আগস্টে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ২২ কোটি ৩২ লাখ ডলারের, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের। এ খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৮ শতাংশ। পাটপণ্য রফতানি হয়েছে ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলারের, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। এ খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ২২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। কৃষি পণ্যে গত অর্থবছরে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার ডলার থেকে ১৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ১৭ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। পোশাক পণ্যের মধ্যে নিটওয়্যারে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে এ খাতে ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। হোম টেক্সটাইল রফতানি খাতে নতুন সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলছে। এক অর্থবছরের ব্যবধানে এ খাতে ৫৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ আয় বেড়ে হয়েছে ২৬ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার ডলার।