
২০১৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বৈধ বিদেশী কর্মীদের কল্যাণ দেখভালের দায়িত্ব পায় দেশটির সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (সকসো)। এর আগে এই দায়িত্ব ছিল মালয়েশিয়ান লেবার ডিপার্টমেন্টের। সকসো মালয়েশিয়ান নাগরিকদের কল্যাণ দেখে থাকে। নিজ দেশের কর্মীর মত বিদেশী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার ফলে মালয়েশিয়ান ও বিদেশী কর্মীদের মধ্যে বৈষম্য দূর হয়।
সকসো কর্মীর দুর্ঘটনা হলে তার চিকিৎসা, পুনর্বাসন, আজীবন মাসিক ভাতা, সেবা প্রদানকারীর ভাতা, হুইল চেয়ার, কৃত্রিম পা, হাত লাগিয়ে দেয়, কর্মী মারা গেলে পরিবারকে মাসিক ভাতা দেয়, অবিবাহিত কর্মী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পিতা মাতাকে আজীবন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ভাই বোনকে মাসিক ভাতা দেয়। এই ভাতা কর্মী বা কর্মীর পরিবার নিজ দেশে অবস্থান করলেও পাবে।
বাংলাদেশে অবস্থান করেও কিভাবে ভাতা পাবে সে বিষয়ে একটি কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য সকসো কয়েক বছর আগেই বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্ণার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের নিকট একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সে থেকে বিষয়টি ঝুলে আছে। ফলে বাংলাদেশে বসে আজীবন সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী নিয়োগকর্তারা সকসোতে বিদেশী কর্মীদের নাম নিবন্ধন করেছে। ফলে করোনা কালে ৩ হাজারের অধিক কর্মীর নানান ধরনের সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
মালয়েশিয়া দিতে প্রস্তত এ কারণে চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু চুক্তি না হওয়ায় দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে দেশে ফিরে গেলে দেশে বসে আজীবন ভাতা প্রাপ্তির এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে লাশ হয়ে দেশে ফিরে গেলে পরিবারের পক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করেছে।

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে দূতাবাস অনেক আগেই চুক্তিটি মতামতসহ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এবং ওয়েজ আর্নাস ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের নিকট পাঠিয়ে দিয়েছে। দূতাবাস চুক্তিটি করার পক্ষে মত দিয়েছে বলে জানা গেছে। বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে জরুরী হওয়ায় দূতাবাস প্রতিনিয়ত মালয়েশিয়ার নিকট থেকে তাগাদা পাচ্ছে এবং একইভাবে দূতাবাস ওয়েজ বোর্ড এবং মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ১৩ আগষ্ট শনিবার জানতে ফোনে যোগাযোগ করা হলে ওয়েজ বোর্ডের কাউকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের তৎকালীন পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো: শফিকুল ইসলামে নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি সকসোর সাথে সভা করেন। সকসো প্রধান নিজে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও ওয়েজ আর্নারস ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের সাথে সাক্ষাৎ ও সভা করে অনুরোধ করেছেন। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সরোয়ার ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর নিজেও সকসো”র প্রধান নির্বাহীর সাথে বৈঠক করেন সে বৈঠকেও সকসো”র প্রধান নির্বাহী পরিচালক, কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষরের অনুরোধ করেন।
মালয়েশিয়া বাংলাদেশের কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ প্রান্তে নিশ্চয়তা চায় । চুক্তি করা হলে ওয়েজ বোর্ডের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোর্ড সহযোগিতা পাবে। এরফলে বাংলাদেশে বসে মালয়েশিয়ান সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধূরী বলেন, ‘ মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর জন্য যে রকম দ্রুত গতিতে চুক্তি করেছে ঠিক এই কল্যানের কাজটিকেও গুরুত্ব দিয়ে চুক্তি করা নৈতিক দায়িত্ব। অহেতুক কালক্ষেপণ করা সমীচীন হবে না।
এতে কর্মী ও কর্মীর পরিবার বঞ্চিত হবে। প্রবাসী কর্মীর ও পরিবারের দেশে বসে আজীবন ভাতা প্রাপ্তির ঘটনা এটাই প্রথম এবং ইতিহাস। সরকারের এ সাফল্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।’
এদিকে যারা ইতোমধ্যে মারা গেছেন এবং পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবেন দূতাবাস থেকে তাদের তথ্য চেয়ে ওয়েজ আরনার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের নিকট শতাধিক পত্র প্রেরণ করা হলেও দীর্ঘদিন যাবত তাদের সম্পর্কে তথ্য প্রেরণ না করায় মালয়েশিয়া থেকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না দেবার কারনে অনেক কর্মীর পরিবার এর ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অপর দিকে দেখা গেছে যে, যাদের সম্পর্কে কোন তথ্য চায়নি মালয়েশিয়া তাদের কাগজ পত্র ওয়েজবোর্ড খুব দ্রুত দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়! পরে থাকে প্রকৃত দাবিদারদের কাগজপত্র।
এটিএন বাংলার কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স এডিটর কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলেন, মালয়েশিয়া আজীবন ভাতা দিবে বিধায় বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার সাথে অনেক কাজ করতে হবে ওয়েজ আর্নার্স অয়েল ফেয়ার বোর্ডের। তাই চুক্তিটি খুব গুরুত্বপূর্ন। বোর্ডের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
একটি শক্তিশালী বোর্ড থাকার পরেও দপ্তরকে অনিয়ম, গতিহীন ও গুরুত্বহীন করে রাখা সত্যিই অবাক করে! প্রবাসী কর্মী ও তার পরিবারের আশা ভরসার একমাত্র স্থল ওয়েজ অর্নার্স ওয়েল ফেয়ার বোর্ডের কাজ পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে পালন করা উচিৎ।’
অভিবাসন বিষয়ক সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী বলেন, ‘ মালয়েশিয়া বাংলাদেশী কর্মীদের আজীবন ভাতা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের যে সুযোগ দিয়েছে সেটি অভূতপূর্ব। কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি তাদের আইনগত অধিকার। গুরুত্ব না দেবার ফলে অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়াটা খুবই দুঃখের ও কষ্টের। অগ্রধিকার দিয়ে এসব কাজ সম্পাদন করা উচিত।