অর্থনীতিমতামত

যুদ্ধের ঢেউ কি তবে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে?

যুদ্ধের ঢেউ কি তবে বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে?
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ এখন প্রায় ৯৫% ইম্পোর্টেড কনস্ট্রাকশন পাথরের উপর নির্ভরশীল। এর মাঝে ১০-১৫% আসে মেঘালয় থেকে সিলেটে। ২০-২৫% আসে ঝাড়খণ্ড থেকে সোনামসজিদ হয়ে। অল্প কিছু আসে ভুটান থেকে। এর বাইরে প্রায় ৫৫-৭০% পাথরই আসে সাগর পথে মধ্যপ্রাচ্যে(আরব আমিরাত, ওমান), ভারত (ভিশাখাপাটম, গুজরাট), ভিয়েতনাম থেকে। গতবছর ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে চট্টগ্রাম মাঝিরঘাট পর্যন্ত এর খরচ পড়েছে পার টনে ৩১০০-৩৩০০ টাকা।

সে একই পাথর এখন ৪৪০০-৪৬০০ টাকা। অথচ উৎসমূলে পাথরের দাম এক পয়সাও বাড়েনি। বেড়েছে জাহাজ ভাড়া। সে জাহাজ ভাড়া ছিল ১০ ডলার সে ভাড়া এখন ২২/২৪ ডলার টনে।
গত বছর ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার কয়লা বিক্রি হয়েছে প্রতি টন ৭০০০-৭৫০০ করে। একই কয়লা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০০০-১৯০০০ টন। ফলে ইট ভাটার খরচ বেড়েছে। ৬ টাকার ইট এখন ১০ টাকা। তাতেও উৎপাদন খরচে ভারসাম্য নাই।
এভাবে প্রতিটি পণ্যের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় সব কিছুই দ্বিগুণ বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি চায়না থেকে যে কাগজ আসে, সে কাগজও বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি। FOB মোটামুটি আগের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেলেও CFR আগুন।
সরাসরি সরকারের অন্যতম আমদানি পণ্যের একটি হচ্ছে জ্বালানি তেল। বিশ্ববাজারে এই তেলের দাম ও ক্যারিং খরচ বৃদ্ধি পাওয়াতে খোদ আরব আমিরাতে তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশের টাকার অনুপাতে লো গ্রেডের অকটেনের দাম ১০৫ টাকা। এর কারণে গতকাল থেকে দুবাই শহরে ট্যাক্সি ভাড়া বৃদ্ধি করেছে।
সুতরাং রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব যে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে প্রভাবিত করেনি, এ কথা বলা যাবে না। বরঞ্চ এই অজুহাতে পৃথিবীর প্রায় সব কোম্পানী স্ব স্ব স্থানে প্রাইস বাড়িয়েছে৷ আমিরাতে যখন আমি পাথর খণিতে পরিদর্শন করছিলাম, তারা জানাল গত দুই মাসে খুব অল্প পরিমাণ মাইনিং হয়েছে কারণ মাইন আসে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের কারণে মাইন কম আসাতে ব্লাস্টিং স্লো। ফলে সিডিউল দিয়েও জাহাজ লোড করা কঠিন হয়ে যায়। এর কারণে জাহাজে ওয়েটিং ড্যামারেজ হচ্ছে।
করোনা যে ক্ষতি করতে পারেনি, যুদ্ধ তার চেয়ে বহু মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বাস্তব জীবনে। এর ক্ষতিকর প্রভাব ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান এবং বাস্তব জীবনে টের পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের মাননীয়  প্রাইম মিনিস্টার যে সাবধান বাণী দিয়েছেন, আমার মনে হচ্ছে নিরুপায় হয়েই দিয়েছেন। না হয় কে জনগণের কাছে ছোট হতে চায়।
যুদ্ধ যদি চলমান থাকে, হয়তো এমন দিন আসছে যখন আমাদের হাতে টাকা থাকবে কিন্তু জ্বালানী থাকবে না। আমাদের গাড়ি, ট্রেন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দেখা যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো, পানির শোধনাগারগুলো জ্বালানীর অভাবে উৎপাদন করতে পারছে না।
তখন হয়তো দেখা যাবে ঘরে ঘরে আবার সেই হাতপাখা, শীতল পাটি, মোমবাতি এবং জানালার ফাঁক গলে চাঁদের আলো।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button