দেশহাইলাইটস

পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৬ মিনিট

585মাওয়া-জাজিরা নৌপথে ফেরিতে উঠে নদী পারাপার হতেই সময় লাগে এক-দেড় ঘণ্টা। ফেরিতে ওঠার অপেক্ষার কোনো ঠিকানা নেই। ভাগ্য ভালো থাকলে ফেরির দেখা মেলে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। গাড়ির চাপ বাড়লে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় দীর্ঘায়িত হয় যাত্রাপথের দুর্ভোগ। পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের এ কষ্ট। টোলপ্লাজার আনুষ্ঠানিকতা মিটিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৬ মিনিট।

টোল দিয়ে ব্যবহার করতে হবে পদ্মা সেতু। এজন্য যানবাহন ভেদে টোলহার নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। টোল আদায়ে ম্যানুয়াল ও অটোমেশন দুই পদ্ধতিই চলবে। প্রথমে একটি কাউন্টারে অটোমেশন হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোতে করা হবে। তবে সেতু চালুর পর পরই অটোমেশনে যাওয়া সম্ভব হবে। পদ্মা সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পেয়েছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যান চলাচল শুরুর পর অটোমেশন কাজ শুরু করতে প্রতিষ্ঠানটির ছয় মাসের মতো সময় লাগার কথা জানিয়েছেন সরকারের সেতু বিভাগের সচিব মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, শুরুতে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোলবুথে নগদ টাকা বা ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টোলের টাকা দেয়া যাবে। পরবর্তী সময়ে অটোমেশনের মাধ্যমে পৃথক টোলবুথ করা হবে। এসব বুথে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হবে টোল আদায় কার্যক্রম।

২৫ জুন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর অংশ নেবেন সুধী সমাবেশে। বেলা ১১টার দিকে চলে যাবেন জাজিরায়। ফলক উন্মোচনের পর ভাষণ দেবেন জনসভায়। প্রধানমন্ত্রী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেও যানবাহন চলাচল শুরু হবে পরের দিন। গতকাল মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-১-এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৬ জুন সকাল ৬টায় পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।

পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশের মানুষের দুর্ভোগের অবসান হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কখনো কখনো ১০-১২ ঘণ্টা লেগে যায় শুধু পদ্মা নদী পাড়ি দিতে। সেতু চালুর পর এ পথ পাড়ি দেয়া যাবে মাত্র ৬ মিনিটে। পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। এটি আমাদের সামর্থ্য ও সক্ষমতার সেতু। একদিকে সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার স্বপ্নের সোনালি ফসল। অনেকেই সন্দেহ করেছিলেন যে এ সেতু হবে না। কিন্তু আমরা হতাশ হইনি। তাতে আমাদের মনবল আরো দৃঢ় হয়েছে। শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন আমরাও পারি। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি। যত সমালোচনা হয়েছে আমাদের মনোবল আরো দৃঢ় হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে। বিশ্বব্যাংক ভুল স্বীকার করেছে।

সেতুর নির্মাণ খরচ সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে করা হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩৫ বছরে সেতু বিভাগ সরকারকে ৩৬ হাজার কোটি টাকা দেবে। এছাড়া নদীশাসনসহ সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ রয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে শুরু করে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানোর চিন্তা করছি। নেত্রী আমাদের সেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমন্ত্রণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। আমন্ত্রণপত্র ছাপানো শেষ হয়েছে। বিদেশী যাদের আমন্ত্রণ করব, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেব। তারা পরে তাদের মতো করে পাঠাবে। আর খালেদা জিয়াকে আমরা চিঠি দেব। আগামী বৃহস্পতিবার আমন্ত্রণ জানানো শুরু করব।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button