অর্থনীতিবিদেশহাইলাইটস

স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার

স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার করোনা মহামারী থেকে সৃষ্ট বহুমুখী সংকট তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। একের পর এক চ্যালেঞ্জে দীর্ঘ সময় ধরেই অস্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার। তবে সম্প্রতি পরিস্থিতিতে কিছুটা স্বস্তির বাতাস বইতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে পণ্যবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে ঊর্ধ্বমুখী বিক্রি। খবর আনাদোলু এজেন্সি।

গত সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সহনশীল নীতিমালা এবং চীনে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিলকরণ বাজারে ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে।

এ সময় স্বর্ণের দাম কমেছে দশমিক ২ শতাংশ, রুপার দশমিক ৯ ও প্যালাডিয়ামের দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে কমেছে। যদিও প্লাটিনামের দাম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুনাফার হার বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। এতে চাপের মুখে পড়েছে ধাতব পণ্যের বাজার। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে স্বর্ণ।

বিশ্লেষকরা আরো বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে প্যালাডিয়ামের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতিতে অটোমোবাইল শিল্পের উৎপাদকরা বিকল্প পণ্য হিসেবে প্লাটিনামের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। এ কারণে অন্যান্য ধাতব পণ্যের বাজারে নিম্নমুখী চাপ তৈরি হলেও প্লাটিনামের দাম বেড়েছে।

গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে তামার দাম দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের দাম কমেছে ২ দশমিক ৮ ও নিকেলের ৩ শতাংশ। তবে দস্তা ও সিসার দাম বেড়েছে।

এদিকে ধাতব পণ্যের বাজারদর কমলেও ঊর্ধ্বমুখী ছিল জ্বালানি পণ্যের বাজার। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ।

গত সপ্তাহেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা নতুন করে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে একমত হন। ব্লকটি রাশিয়া থেকে ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণেই জ্বালানি পণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা না এলে জ্বালানি তেলের বাজারেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যেত।

অন্যদিকে কৃষিপণ্যের বাজারে গত সপ্তাহে গমের দাম কমেছে ১০ দশমিক ২, ভুট্টার ৬ দশমিক ৪, চাল ও তুলার ৩ দশমিক ৯, সয়াবিনের ২ এবং চিনির ১ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে কফির দাম ১ দশমিক ৩ ও কোকোর দাম দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে, বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের দাম টানা দ্বিতীয় মাসের মতো কমেছে। ভোজ্যতেলের নিম্নমুখী দাম এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।

মে মাসে এফএওর খাদ্যপণ্যের মূল্যসূচক এক মাসের ব্যবধানে দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। এর আগের মাসে মূল্যসূচক কমেছিল দশমিক ৮ শতাংশ। সূচক দাঁড়িয়েছে ১৫৭ দশমিক ৪ পয়েন্টে।

কয়েক বছর ধরেই খাদ্যপণ্যের দাম তীব্র মাত্রায় বাড়ছে। মহামারীজনিত সরবরাহ চেইনে সংকট, ভয়াবহ বৈরী আবহওয়া দাম বাড়াতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যেই চলতি বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সূত্রপাত হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ আকার ধারণ করে। তার ওপর ভারতের গম ও মালয়েশিয়ার পাম অয়েল রফতানি বন্ধের ঘোষণার কারণে বাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।

তবে গত মাসের শেষ দিকে পাম অয়েল রফতানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয় বিশ্বের শীর্ষ রফতানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। এতে ভোজ্যতেলের বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। মে মাসে ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক দাম এক মাসের ব্যবধানে কমেছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দুগ্ধপণ্যের দাম এপ্রিলের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button