
পরিবার নিয়ে ঢাকার জিগাতলা থেকে ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে না, সে সঙ্গে এটি ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিশাল এক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। এখানে আসার এক্সপ্রেসওয়ে সড়কটিও অসাধারণ। রঙ-বেরঙের ফুলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যানজটহীন পথে চলে আসা যায় পদ্মা সেতুর কাছে। সব মিলিয়ে পর্যটনের নতুন হাব এখন মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া-শিমুলিয়া। ছুটির দিনগুলো ছাড়াও ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদচারণয় মুখর হয়ে ওঠে পদ্মার পাড়। তাই সুযোগ পেয়েই পরিবার নিয়ে দেখতে এসেছি স্বপ্নের এ সেতু।
ঢাকার মিরপুর থেকে ঘুরতে আসা এক নারী জানান, টেলিভিশনে প্রতিদিনই পদ্মা সেতুর খবর দেখি। আজকে বাস্তবে দেখার জন্য সকালেই ছুটে এসেছি পরিবার নিয়ে। সেতুর ওপরে উঠতে পারলে খুব ভালো লাগত, নিরাপত্তার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবু সবার খুবই ভালো সময় কেটেছে।
ঢাকা থেকে মাওয়া ঘুরতে আসা আরেক নারী জানান, যমুনা সেতু চালু হওয়ায় উত্তরবঙ্গের মানুষের যেমন দুর্ভোগ কমেছে, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্ট শেষ হবে। এবার সড়কপথে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গে বাধাহীনভাবে যাওয়া যাবে।
পদ্মা সেতু ও আশপাশ এলাকা ঘুরতে আশা মাইনুল ইসলাম হৃদয় নামে আরও একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, এখানে সবই অপরূপ। পদ্মা সেতু, পদ্মা নদী সবই আকর্ষণীয়।
অন্যদিকে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার মাওয়া প্রান্তে পদ্মার পাড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। একনজর পদ্মা সেতু দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে সেখানে। পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েও কেউ কেউ ছুটে আসে পদ্মা পাড়ে। উৎফুল্ল জনতা সেখানে ক্যামেরাবন্দি করে নিজেদের। কেউ কেউ সেলফি তুলতে ব্যস্ত। আবার অনেকেই ট্রলারে করে পদ্মা নদীতে ঘুরে ঘুরে পুরো সেতু অবলোকন করে। বেলুন উড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একই সঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্লাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ। সেতুর মূল আকৃতি দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) এবং নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড।