প্রবাস

মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে মানব পাচারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিল পাস

মালয়েশিয়ামানব পাচার বিরোধী এবং অভিবাসীদের পাচার বিরোধী (সংশোধনী) বিল ২০২১ পাস করেছে মালয়েশিয়ার পার্লামেন্টে। যার ফলে মানব পাচার অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে।
সংশোধনীতে একটি মানব পাচার বিরোধী এবং অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী কাউন্সিল পুনর্গঠনসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য শাস্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।
“সংশোধনী মানব পাচার এবং অভিবাসীদের চোরাচালানের জন্য ১৫ থেকে ২০ বছর কারাদন্ড বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত।
“এটি ছাডড়াও, আরও গুরুতর অপরাধের জন্য, প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলি সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মতো শাস্তিও বাড়িয়েছে যার মধ্যে বেত্রাঘাতও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বুধবার ১৫ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজাহ জয়নুদিন বিলটি পেশ করার সময় বলেন, সরকারী কর্মচারী জড়িত থাকলে এবং অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তি পাবে।
“এর মধ্যে রয়েছে পাচারের শিকার ব্যক্তি গুরুতর আঘাত পেলে বা মৃত্যু ঘটলে বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়া বা আত্মহত্যা করলে  পাচারকারীর গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
“এছাড়াও শিশু এবং পংগু ব্যক্তিকে পাচারের শিকার করলে গুরুতর অপরাধ হবে।
তিনি বলেন, ” সরকার গুরত্ব দিয়ে শুধু কারাদন্ড বৃদ্ধি নয় বেত্রাঘাত শাস্তির বিধান রেখেছে। “
তিনি আরও বলেন যে মানব পাচার বিরোধী এবং অভিবাসী চোরাচালান বিরোধী কাউন্সিলের সদস্যপদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ জন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সদস্যদের মধ্যে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং কমিউনিটি থেকে অন্তর্ভুক্ত হবে।  ” মালয়েশিয়ান পরিবারের ধারণার সাথে সামঞ্জস্য রেখে  ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য এনজিও এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততার বিধান করা হয়েছে।”
তিনি সংসদকে জানান ২০১৫ সাল থেকে মানব পাচারের মোট ১,৯১৫টি এবং অভিবাসীদের ১,০৫২টি পাচারের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ১১,৯৪২ ভুক্তভোগীকে রক্ষা করা হয়েছে এবং সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। তিনি মানব পাচার প্রতিরোধে সব পক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
তিনি বলেন যে মানব পাচার বা অভিবাসী চোরাচালানের সাথে জড়িত সিন্ডিকেট বা এজেন্টদের টার্গেট করে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন আছে। ডেপুটি স্পিকার দাতুক মোহাম্মদ রশিদ হাসনন পরে ঘোষণা করেন, বিলটি  সংসদে (দেওয়ান রাকায়াত) কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।
 মালয়েশিয়া জোরপূর্বক শ্রম ও মানব পাচার বন্ধে মালয়েশিয়া সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ( আইএলও)সাথে মিলে একটি গাইড লাইন দিয়েছে।  সম্প্রতি মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় জোরপূর্বক শ্রম এবং মানব পাচার সংক্রান্ত একশন প্লান বাস্তবায়ন শুরু করেছে। মালয়েশিয়ায় যে কোনো দেশি বা বিদেশি শ্রমিক বা কর্মীকে নিয়োগকর্তা বা কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করলে বা এ উদ্দেশ্যে পাচারের শিকার করা হলে মালয়েশিয়ার পুলিশ,  শ্রম দপ্তর, মানব পাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল, ট্রেড ইউনিয়ন এবং নির্ধারিত বেসরকারি সংস্থায় রিপোর্ট করতে পারবে।
মানব পাচার সম্পর্কে মালয়েশিয়ার এন্টি ট্রাফিকিং ইন পারসন অ্যান্ড এন্টি স্মাগলিং অব মাইগ্রেন্ট আইন ২০০৭ উল্লেখ করা হয়েছে যে, trafficking in persons means all actions involved in acquiring or maintaining the labour or services of a person through coercion, and includes the act of recruiting, conveying, transferring, harboring, providing or receiving a person for the purposes of this act.  এ আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাক্তিকে জোর জবরদস্তিমূলকভাবে নিয়োগ করে, পৌঁছে দেয়, স্থানান্তর করা/পরিবহন করে, আশ্রয়/কোথাও রেখে দেওয়া এবং গ্রহণ করাকে মানব পাচার  অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়াও এতদ উদ্দেশ্যে বল প্রয়োগ করে বা হুমকি দেয়, জোর জবরদস্তি করে, অপহরণ করে, প্রতারণা করা, ভুল তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করে, দুর্বলতার সুযোগ নেয়, এ থেকে আয় করে এবং শোষণ করে  তাহলে যেখানেই সংঘটিত হোক না কেন তা মানব পাচার এবং অভিবাসী স্মাগলিং অপরাধ সংঘটিত হবে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে মর্মে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বিভিন্ন এনজিও  বিভিন্ন সময় বলেছে। এ কারণে আমেরিকা, বৃটেন এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নে মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।  আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়ার মানের অবনমন হয়েছে যা থেকে উত্তরনের জন্য এ ধরনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে।
 গাইড লাইনে উল্লিখিত ২২টি তথ্য হলো:  কর্মক্ষেত্রে প্রকৃতি (কাজ, বেতন, আবাসন , নিরাপত্তা) এবং শর্ত সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল (বিদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে দেশে এরূপ করা হয়েছে); পাসপোর্ট, আইনি বা অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র আটকে রাখা;  শারীরিক বা যৌন নির্যাতন/ সহিংসতা; সংবেদনশীল শব্দ বা মৌখিক/কথার দ্বারা নির্যাতন; নিজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সহিংসতার হুমকি; কাগজপত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে (পুলিশ বা ইমিগ্রেশন ) জানাতে বা ধরিয়ে দিতে হুমকি দেওয়া;   বাড়িতে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেওয়া;  কাজের অনুমতি বা ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করার হুমকি দেওয়া, ঋণ বা ধারদেনা করলে তা বৃদ্ধির হুমকি দেওয়া, কালো তালিকাভুক্ত (ব্ল্যাক লিস্ট) করার হুমকি দেওয়া, অনুপযুক্ত শর্তাদির জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি বা নিয়োগকারীদের অর্থ প্রদান, অতিরিক্ত রিক্রুটিং ফিস দিতে বাধ্য করা, বেতন আটকানো, অন্যায়ভাবে বেতন থেকে টাকা কাটা, অবরুদ্ধ থাকা, পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে না দেওয়া, অতিরিক্ত কাজ করান,  ছুটির দিন উপভোগ করতে না দেওয়া বা ছুটি নেওয়ার অনুমতি নেই, জীবনযাত্রার/বসবাসের অবনতি ঘটছে এবং পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয়নি।
উল্লিখিত ২২টি পয়েন্টের মধ্যে অতিরিক্ত শ্রম, বেতন কম, ওভারটাইম না পাওয়া, ছুটির দিনেও কাজ করা, ঋণ করে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা, অতিরিক্ত রিক্রুটিং খরচ দেওয়া, দেশে রিক্রুটমেন্ট সময়ে যে কাজের ও বেতনের কথা বলা হয়েছিল তার  সাথে মিল না থাকা, দালাল এবং বাসস্থানের খারাপ অবস্থার তথ্য আমেরিকা কর্তৃক এবং ইউকের ইউনিভার্সিটি নিউ ক্যাসলের গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ধরনের প্রলুব্ধ করে কোন ব্যক্তিকে অভিবাসন করা হলে তা মানব পাচার বলে গণ্য করা হয়েছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button