অর্থনীতিহাইলাইটস

মুক্তা চাষে সফল সুনামগঞ্জের নাজিম

268সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিন। পেশায় ছিলেন একজন এনজিও কর্মী। কাজের সূত্রে পরিচয় হয় ময়মনসিংহের কয়েকজন মুক্তাচাষীর সঙ্গে। তাদের মুক্তা চাষ দেখে আগ্রহ জন্মায়। শখের বশে নিজের ৪০ শতাংশ জায়গায় ৫০০ ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। বছর শেষে দেখেন অধিকাংশ ঝিনুক মারা গেছে। হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি। প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারো মুক্তা চাষ শুরু করেন। এবার সফলতার দেখা মেলে। বছর শেষে আয় হয় ৭০ হাজার টাকা। এর পর থেকে নাজিম উদ্দিনের আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি এখন সফল মুক্তাচাষী। সিলেট, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি ভারতেও বিক্রি করছেন তার উৎপাদিত মুক্তা। এর মাধ্যমে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কর্তৃপক্ষের সহায়তা পেলে এসব মুক্তা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন নাজিম উদ্দিন।

নাজিম উদ্দিন জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৭ সালে শখের বশে নিজের ৪০ শতাংশ জায়গার পুকুরে মাছের পাশাপাশি ৭ হাজার টাকার ঝিনুক দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন। শুরুতেই কাঙ্ক্ষিত ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে যান তিনি। পরে ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ মুক্তা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র বর্মণের কাছে গিয়ে আবারো প্রশিক্ষণ নেন। কেনেন প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতি। ২০১৯ সালে হাওরসহ বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ৮০০ ঝিনুক দিয়ে পুনরায় চাষ শুরু করেন। ২০২০ সালে করোনার কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। তবে চলতি বছর নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করেছেন। ৩ হাজার ৫০০ ঝিনুক ছেড়েছেন পুকুরে। এবার ৫-৬ লাখ টাকার মুক্তা বিক্রির প্রত্যাশা করছেন তিনি।

এদিকে তার খামারে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারাও মুক্তা চাষের পুরো প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা মুক্তা চাষ করছেন। পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছেন। এরই মধ্যে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শাহ ফখরুল মাসুম নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তা মুক্তা চাষ শুরু করেছেন।

খামারের কর্মচারী র্যাবন সূত্রধর, মহাময়া সূত্রধর, জাকারিয়াসহ অনেকে বলেন, তারা অনেকে বেকার ছিলেন। নাজিম উদ্দিনের খামারে কাজ করার সুবাধে তাদের বেকারত্ব দূর হয়েছে। ভালো টাকা বেতন পাচ্ছেন। অনেকে এ খামারে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তাদের দাবি, সরকার মুক্তা চাষে গুরুত্ব দিলে দেশের অর্থনীতিতে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

মুক্তাচাষী নাজিম উদ্দিন বলেন, হাওরসহ নদ-নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে অপারেশনের মাধ্যমে মুক্তা চাষ করতে হয়। একটি ঝিনুকে দু-তিনটি মুক্তা জন্ম নিতে পারে। প্রায় ১০ মাস পর প্রতিটি ঝিনুক থেকে পরিপূর্ণ মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার দুটি ধরন রয়েছে। একটি রাইস মুক্তা, আরেকটি ইমেইজ মুক্তা। ইমেইজ মুক্তার চাহিদা বেশি। মুক্তা চাষ করে প্রথমে লোকসান হলেও এখন লাভবান হচ্ছি। বাংলাদেশের জুয়েলারির দোকান ছাড়া মুক্তা বিক্রি করা যায় না। সরকারি চাকরিজীবী, এনজিও কর্মী, ইউনিসেফ প্রতিনিধিসহ অনেকে আমার কাছ থেকে মুক্তা কিনে নেন। পাশাপাশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশেও মুক্তা বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মুক্তা চাষ মাছ চাষের মতো নয়। এজন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ থাকতে হয়। নাজিম উদ্দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তা চাষ করেন। আমরা তাকে আমাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করি। প্রথম দুই বছর তিনি অনেক কষ্ট করলেও লাভের মুখ দেখতে পারেননি। কিন্তু বর্তমানে তিনি মুক্তা চাষ করে সফল হয়েছেন। গত বছর তিনি মুক্তা চাষ করে ১ লাখ টাকা লাভ করেছেন।

এবার মুক্তা বেশি মারা যায়নি। তাই অনেক লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন। নাজিম উদ্দিন সিলেট-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তা বিক্রি করে থাকেন।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button