২০ বছরে দুবাইয়ের মানবসৃষ্ট দ্বীপ পাম জুমেইরা
সাগরের বুকে মানুষের সৃজনশীলতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ২০টি বছর পার করে দিল কৃত্রিম দ্বীপ পাম জুমেইরা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে জনবহুল শহর দুবাইয়ে ২০০১ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
দুবাইয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে পাম জুমেইরা অন্যতম। এখানে রয়েছে অসংখ্য বিলাসবহুল হোটেল, অসম্ভব সুন্দর সমুদ্রতট, বড় ও রাজকীয় অ্যাপার্টমেন্ট। প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস এই দ্বীপটিতে।
এই দ্বীপটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ডেভেলপার সংস্থা নাখিলের নাম।
দ্বীপটির ভিত্তি তৈরি করার জন্য ইস্পাত কিংবা কংক্রিট ব্যবহার করা হয়নি। এর পরিবর্তে, নির্মাণকাজে নিয়োজিত দলটি শুধু বালু আর পাথর ব্যবহার করেছেন। তবে এতে মরুভূমির বালু ব্যবহার করা হয়নি। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও এই উপাদানের ওপর ভরসা রাখা যায়নি। কারণ হিসেবে প্রকল্পটির উপদেষ্টা আলী মনসুর বলেন, ‘মরুভূমির বালু পানির সংস্পর্শে এলে তরল হয়ে যায়।’
দ্বীপ থেকে ১০ নটিকাল মাইল দূরে অবস্থিত একটি জায়গায় পারস্য উপসাগরের তলদেশ থেকে ড্রেজিং করে প্রায় ১২০ মিলিয়ন ঘনমিটার বালু উত্তোলন করা হয় এবং সেগুলো নির্মাণ কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়। এ ছাড়াও আরব আমিরাতের উত্তরাঞ্চলের হজর পর্বত থেকে ৭ মিলিয়ন টন পাথর খুঁড়ে আনা হয়।
এই পাথরগুলো দিয়ে অর্ধ-চন্দ্রাকৃতির ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করা হয়েছে, যেটি উঁচু ঢেউ আর তীব্র গতির বাতাস থেকে দ্বীপটিকে রক্ষা করে। নাখিলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দ্বীপ তৈরিতে ব্যবহৃত সব পাথর আর বালু ব্যবহার করে পুরো পৃথিবীকে চক্রাকারে ৩ বার বেষ্টনী দেওয়ার উপযোগী একটি ২ মিটার উঁচু দেওয়াল বানানো সম্ভব।
৫৬০ হেক্টর (১ হাজার ৩৮০ একর) দীর্ঘ দ্বীপটি নির্মাণ করতে সাহায্য নেওয়া হয়েছে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির।
পেশায় পুরকৌশলী আলী মনসুর একজন অভিজ্ঞ ও চৌকস ডুবুরী। তিনি এবং তার ৫ জন সহকর্মী প্রায় ১০ সপ্তাহ সময় নিয়ে দ্বীপকে সুরক্ষা বেষ্টনী দেওয়া বাঁধ পরীক্ষা করেন। পানির বিভিন্ন উচ্চতায় তারা একক ও দলবদ্ধভাবে বাঁধের শক্তিমত্তা পরীক্ষা করেছেন।
২০০১ সালে এই প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হওয়ার এক বছর পর নাখিলে যোগ দেন আলী মনসুর। ১৯৯৮ সালে তিনি কানাডা থেকে দুবাই এসেছিলেন।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি জানান, আধুনিক সফটওয়্যার প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও একজন প্রথাগত মানুষ হওয়ায় তিনি নিজের চোখে দেখে নিরীক্ষণ করার পক্ষপাতী।
এই পুরো দ্বীপ একবারে দেখতে হলে দর্শনার্থীদের জন্য দুটি উপায় ছিল। হয় তাদের হেলিকপ্টারে উড়ে দেখতে হতো অথবা উড়োজাহাজ থেকে প্যারাসুট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হতো। কিন্তু এখন দর্শনার্থীরা ৫২তলা উচ্চতায় অবস্থিত ৩৬০ ডিগ্রি অবজারভেশন ডেক থেকে পুরো দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। ভিউ এট দ্য পাম নামের এই ডেকের উদ্বোধন হয়েছে গত এপ্রিলে। এটিও নির্মাণ করেছে নাখিল।
এ বছরের শেষ নাগাদ উদ্বোধন হবে ‘পাম টাওয়ার’। যার একটি অংশ ভিউ এট দ্য পাম। আটলান্টিস রিসোর্ট ও পাম ওয়েস্ট বিচের পাশাপাশি এটিও দ্বীপটির সাম্প্রতিকতম আকর্ষণ। ইতোমধ্যে পাম জুমেইরা বিশ্বের বৃহত্তম ফোয়ারার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছে।