দেশহাইলাইটস

একজন ভাষাসৈনিক খলিল স্যারের চাওয়া

২৫
ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমান খলিল

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এখন ভেড়ামারার ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমান খলিল। শরীর মোটেও ভালো যাচ্ছে না। রুচি নেই। ফলের রস, সুজি আর তরল খাওয়ার দু-একবার খেলেও অধিকাংশ সময় কাটে তার না খেয়ে। ভেঙে গেছে শরীর। বিছানা থেকে উঠতেও পারেন না এখন। বই পড়ার তীব্র নেশা থাকলেও বই পড়ারও আর শক্তি নেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক খলিল স্যারের।

যে কোনো সময় মৃত্যুবরণ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে তার পরিবার। তাদের প্রশ্ন, আর কবে মিলবে ভাষাসৈনিকের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। অথচ তার শেষ স্বপ্ন এবং চাওয়া একটিই ভাষাসৈনিক হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

১৯৫১ সাল। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, এমন দাবি ক্রমশ উঠতে শুরু করেছে। এমন সময়ই ঢাকা জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন খলিলুর রহমান। এর পর থেকেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনের মিছিল, মিটিংয়ে অংশ নেন তিনি। তৎকালে জগন্নাথ কলেজের একটি ইউনিটের ছাত্রনেতা হিসেবে মিছিল মিটিংয়ের নেতৃত্ব দিতেন। ’৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন অনবরত গুলি ছুড়ছিল তখন তিনি ছিলেন ওই মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলিতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়লে তিনিও অন্য ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের তাড়া খেয়ে নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করেন। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন বাইশে ফেব্রুয়ারি মজলুম জননেতা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ খলিলুর রহমান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির সেদিনের কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬২ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষাসৈনিক।

২০১৫ সালে প্রথম তাকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিক এবং স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর তাকে নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় পত্রিকা, সংবাদ সংস্থা এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিয়মিত প্রকাশিত হয় সংবাদ। এর পর থেকেই দাবি জোরালো হচ্ছিল ভেড়ামারার একমাত্র ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমানকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার। ভেড়ামারা উপজেলা প্রশাসন তৎকালীন উদ্যোগ গ্রহণ করলেও অদৃশ্য কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৮ সালে ভেড়ামারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শতবর্ষ উৎসব হলে ভাষাসৈনিক খলিলুর রহমান স্যারকে সম্মাননা জানানো হয়।

মাধ্যম
ইসমাইল হোসেন বাবু

এমন আরো সংবাদ

Back to top button