অর্থনীতিহাইলাইটস

গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

65320গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষে আশার আলো দেখছেন মৌলভীবাজারের কৃষকরা। এরই মধ্যে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে টমেটো চাষ করে অভাবনীয় সফলতা পেয়েছেন জেলার কৃষকরা। তাদের মাঝে এ পদ্ধতি এরই মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ বছর অন্তত কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা। বন বেগুন চারার গোড়ার দিকের অংশের সঙ্গে টমেটোর চারার ওপরের দিকের অংশ জোড়া দিয়ে গ্রাফটিং করা হয়। এভাবে লাগানো টমেটোর চারা বড় হয়ে ঢলে পড়ে না, রোগবালাইও তেমন হয় না। ফলন হয় প্রচুর। যেখানে সাধারণ একটি গাছে পাঁচ-দশ কেজি টমেটো মেলে, সেখানে গ্রাফটিং করা প্রতি গাছে মেলে ২০-২৫ কেজি।

সরেজমিনে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা-বাগানের ক্লাব এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা-পাকা টমেটোয় ছেয়ে আছে পুরো মাঠ। কিছু ক্ষেতে টমেটোর নতুন ফুল এসেছে। কিছু কিছু ক্ষেতের টমেটো বিক্রিও শুরু হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় জমি ইজারা নিয়ে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ করছেন চাষীরা।

জানা গেছে, পাত্রখোলা চা-বাগানের ক্লাব এলাকায় বিভিন্ন স্থান থেকে আসা চাষীরা আলাদাভাবে প্রায় ১০০ বিঘা জমি বছর ধরে ইজারা নিয়ে টমেটোর চাষ করেন। জমিপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকায় ইজারা নেন তারা।

আব্দুল মতিন নামে এক চাষী কয়েক বছর ধরে জমি ইজারা নিয়ে তরমুজ-শশার পাশাপাশি টমেটোর চাষ করছেন। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে টমেটোর চাষ করছেন তিনি। মতিন জানান, বিঘাপ্রতি জমিতে শ্রমিক, বাঁশ, চাড়া, সার ও কীটনাশকসহ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এখন পর্যন্ত তিনি ৫ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। এখনো অর্ধেক জমিতে ফসল রয়ে গেছে। হবিগঞ্জ, কুলাউড়া, সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা তার জমির ফসল কিনে নিয়ে যান।

এ বছর টমেটোর আবাদ ও দাম বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন বনগাঁও গ্রামের কৃষক মনির মিয়া। তিনি জানান, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষে এবার ভালো ফলন পেয়েছেন তিনি। চার বিঘা জমিতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে টমেটোর আবাদ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। নিজের ইজারা জমির আরো ৪-৫ টাকার টমেটো বিক্রি হবে বলে আশা করেন তিনি।

এবার অন্তত কোটি টাকার টমেটো বিক্রি হবে বলে আশা চাষীদের। আশা থাকলেও অভিযোগও আছে তাদের। ফলন ভালো হলেও কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের সহায়তার জন্য এলাকায় আসেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। চা-বাগানের অনেক নারী শ্রমিকও টমেটো ক্ষেতে কাজ করেন। তারা দিনপ্রতি ২০০ টাকা করে মজুরি পান। অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় বেকার নারীরাও টমেটো ক্ষেতে কাজ করে সংসারের জন্য উপার্জন করতে পারছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৭৩ হেক্টর গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কমলগঞ্জেই ৫০ হেক্টর চাষ হচ্ছে। অন্যান্য উপজেলার ২০ হেক্টর টমেটোর চাষ হয়েছে। এ বছর চাষীদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯৯০ টন। হেক্টরপ্রতি প্রায় ২২ টন টমেটো উৎপাদন হয়েছে। কলম করা চারা বিক্রি করেও অনেক চাষী লাভবান হয়েছেন। এক কৃষক ৫-৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন বলেও জানা গেছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button