অর্থনীতিহাইলাইটস

মেগা প্রকল্পের সুফল মিলবে আগামী বছর

48521বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ২০২২ সাল হবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার সূচনা। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরই জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সরকারের কয়েকটি মেগা প্রকল্প। বিশেষ করে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেলের একটি অংশ জনসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। একইসঙ্গে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পও চালু করার কথা ভাবছে সরকার। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আর্থিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতেই সরকার দ্রুত এসব কাজ শেষ করতে চাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, স্বপ্নের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এসব প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশের সম্মান, বাঙালির আবেগ। ফলে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে এসব মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

সরকার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়কটি বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করে। অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিশেষ উদ্যোগ নেয় সরকার।

সরকারের এই মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে—পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকায় মেট্রো রেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক রামপাল থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

জানা গেছে, ২০২২ সালে বড় কয়েকটি প্রকল্প জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবার আগে চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। সরকারের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তিনিই জানিয়েছেন, ঢাকায় মেট্রো রেলের আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত অংশে আগামী বছর যাত্রী পরিবহনের আশা রয়েছে। রাজধানীতে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত উড়ালসড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর কথা রয়েছে ২০২২ সালে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পটিও খুলে দেওয়া হতে পারে আগামী বছর। সব মিলিয়ে বড় কয়েকটি প্রকল্পের সুফল আগামী বছর থেকে পেতে শুরু করবে মানুষ। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল খুলে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে আগামী বছরের ডিসেম্বরে।

জানা গেছে, আগামী বছরের জুনে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যে পদ্মা সেতুতে অক্টোবরে শুরু হচ্ছে কার্পেটিংয়ের কাজ। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪০ ও ৪১ নম্বর পিলারের ওপর বসানো রোডস্ল্যাবে পরীক্ষামূলকভাবে কার্পেটিং করা হয়েছে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পদ্মা সেতুতে পুরোদমে কার্পেটিং কাজ শুরু হবে।

আগামী জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে সরাসরি উপকৃত হবে দেশের দক্ষিণের ২১ জেলার মানুষ। বদলে যাবে অর্থনীতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি। মানুষ সেই অপেক্ষায় আছে। বদলে দেবে দেশের জিডিপির আকার। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সড়ক অবকাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েকটি সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দুটি স্থলবন্দর ও তিনটি সমুদ্রবন্দরকে সংযুক্ত করবে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্বপ্নের টানেল নির্মাণ হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্র। আমূল পরিবর্তন আসবে অর্থনৈতিক আঙিনায়। প্রতিষ্ঠিত হবে বহুমুখী যোগাযোগব্যবস্থা। বিস্তৃত হবে চট্টগ্রাম নগর। চাপ কমবে নগরের ওপর। কমবে শহরকেন্দ্রিক নির্ভরতা। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ, আধুনিকায়ন হবে বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, সংযোগ স্থাপিত হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে, যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে, ত্বরান্বিত হবে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ, বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা, গতি পাবে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ, নতুন যোগাযোগব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মেট্রো রেলের বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যেই মেট্রো রেলের একটি সেটে ছয়টি কোচ আছে। ২৪টি ট্রেনের মধ্যে প্রথম সেটটি ঢাকায় এসেছে গত ২৩ এপ্রিল। উত্তরায় ডিপোতে সেটির ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ১৪ মে ডিপোর ভেতর প্রায় ৫০০ মিটার তা চালিয়ে দেখা হয়। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সেট ট্রেনও ঢাকায় এসেছে ১ জুন। ১৬ জুন ডিপোর ভেতর ট্রায়াল ট্র্যাকে (পরীক্ষামূলক চলাচল) মেট্রো রেল চালানো হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রো রেল চালু হতে পারে ২০২৩ সালের জুনের পর। এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এটি চালু হলে রাজধানীর উপর যানবাহনের চাপ কমবে। এতে কমবে যানজট। ঢাকার যানজট নিরসনে এখন মেট্রো রেল ছাড়া আর বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত চালু হবে, ততই মানুষ উপকৃত হবে। মানুষ মেট্রো রেলের জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পটি চালু হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেলযোগাযোগ বাড়বে। প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জুনে না হলেও ডিসেম্বরের মধ্যেই রেলপথটি রেল চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডোরের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপন হবে। পাশাপাশি পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে আনা, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য।

পদ্মা সেতুতে রেল-সংযোগ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালে শতভাগ শেষ না হলেও পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার প্রথম দিনই পরীক্ষামূলক হলেও সেতুতে রেল চালাতে চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এটি পুরোপুরি চালু হলে পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে শিল্পনগরী খুলনা রাজধানী ঢাকা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সম্পৃক্ততা বাড়বে। বাড়বে বরিশাল, যশোর বিমান বন্দরের সম্পৃক্ততাও। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে রেলপথ যুক্ত হবে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে। যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। এতে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। রাজধানীতে যান-চলাচলে গতি আসবে। কমবে যানজট। কমবে নির্ভরতা। জিডিপি সমৃদ্ধ করবে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button