হিরো অফ দি ডে

অনলাইনে ফ্লোরাল জুয়েলারি বেচে লাখপতি শারমিন

সফল উদ্যোক্তা শারমিন তানজিয়া। ছবি : সংগৃহীত
সফল উদ্যোক্তা শারমিন তানজিয়া। ছবি : সংগৃহীত

শারমিন তানজিয়ার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু ২০১৯ সালের শেষের দিক থেকে, তবে পুরোদমে শুরু করেন ২০২০ সালের মে থেকে। জুন, জুলাই, আগস্ট—মাত্র তিন মাসে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) লাখপতির খাতায় নাম লেখান। এ পর্যন্ত উই-এর ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করেছেন।

সম্প্রতি কথা হয় শারমিন তানজিয়ার সঙ্গে । জানান নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের কথা। বলেন, ‘আমার উদ্যোগের নাম এক্সোটিক ডিমান্ডস। সিগনেচার পণ্য হলো ফ্লোরাল জুয়েলারি। আমি শখের বশে এই উদ্যোগ যদিও শুরু করি, তবে ফ্লোরালের নতুন নতুন আইটেম তৈরি করা এখন আমার নেশার মতো হয়ে গেছে। আমার পণ্যের গ্রহণযোগ্যতাও আছে, আলহামদুলিল্লাহ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজ থেকে কিছুটা দূরে থাকতে হচ্ছে। তবে একটু সময় নিয়ে হলেও এই কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই বহু দূর। কিছু মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চাই এই কাজের মাধ্যমে।’

কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? শারমিন তানজিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্য জামদানি ও দেশীয় লোন থ্রি-পিস। তবে আমার সিগনেচার পণ্য হলো ফ্লোরাল জুয়েলারি। প্রায় ১৭-১৮টা আইটেম রয়েছে। যেমন—ফ্লোরাল ব্রাইডাল, নন- ব্রাইডাল গহনা, ব্রোচ পিন, বেন্ড, ক্লিপ, পায়েল, ব্রেসলেট, খোঁপা, ব্রাইডাল পেন, ফ্লোরাল হিজাব, হিজাব পিনসহ আরও অনেক কিছু।’

পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? শারমিন বলেন, ‘যেহেতু আমি ফরেন বায়িং হাউসে জব করতাম, হঠাৎ করে আমার এই উদ্যোক্তা-জীবনে আসলে কেউ খুশি হয়নি। আর আমি এ ধরনের কাজও পারি না, তাই সবাই ধরেই নিয়েছে দুদিন করব, তার পর শেষ। কিন্তু যখন দেখেছে আমি যথেষ্ট সময় দিয়ে, ধৈর্য ধরে কাজ করছি এবং ভালো সাড়া পাচ্ছি, তারা আমাকে অনেক অনেক হেল্প করে এখন কাজ করার জন্য।’

একজন ক্রেতা কেন আপনার পণ্য কিনবে বলে মনে করেন? শারমিন বলেন, ‘যারা কাস্টমাইজড, ইউনিক, এক্সক্লুসিভ ও বাজেট ফ্রেন্ডলি পণ্য খোঁজে, তাদের জন্যই আমার কাজ করা। আমার প্রতিটা পণ্য করা হয় মাত্র এক পিস। কাস্টমারের বাজেট, তার পোশাক, তার অনুষ্ঠান; এসব বিষয় মাথায় রেখে তার জন্য তৈরি করা হয় এক সেট গহনা, যা কেউ বাজারে অ্যাভেইলেবল পাবে না। একটা অনুষ্ঠানে অবশ্যই এই গহনা গ্রহণযোগ্যতা ও ভিন্নতা তৈরি করবে।’

উই-এর ফেসবুক গ্রুপ শারমিনের উদ্যোক্তা-জীবনকে প্রভাবিত করেছে। উই সম্পর্কে তিনি বলেন,  ‘কোভিডে দুনিয়া যখন স্থবির, চারপাশে মৃত্যুর মিছিল, আমিও তখন মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিল আর ১৫-২০ দিন হয়তো বাঁচব। হঠাৎ করে উই-এর মোটিভেশনাল পোস্ট চোখে পড়ল। পড়তে পড়তে টানা অনেকগুলো পড়ে ফেললাম। যে মানুষ ধরেই নিয়েছি বাঁচব না, সেই আমি মনে হয় নতুন জীবনের সন্ধান পেলাম। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখলাম, পরিশ্রম করতে শুরু করলাম। আমি এটা বিশ্বাস করি, তখন উই-কে না পেলে আমার জীবনেও উদ্যোক্তা খাতায় লাখপতির নাম আসত না। আমার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পও লেখা হতো না। অভিজ্ঞতার ঝুলি থাকত না আমার কাছে।’

লাখপতি হতে অন্যদের কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? শারমিন বলেন, ‘নিজের উদ্যোগের পেছনে অনেক সময় দিতে হবে। পণ্যে নতুনত্ব আনতে হবে। পণ্যের গুণগত মান ভালো রাখতে হবে। কাস্টমার সার্ভিস ভালো রাখতে হবে। কাস্টমারের সাথে গুড রিলেশন বজায় রাখতে হবে। কাস্টমারের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রাখতে হবে। ব্যবসায় সততা থাকতে হবে। নোংরা প্রতিযোগিতা এবং কপি করার প্রবণতা বাদ দিতে হবে।’

আগামী দিনের পরিকল্পনা কী? শারমিন তানজিয়া বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন কাজ কিছুটা কম করতে হচ্ছে। ইচ্ছা পোষণ করছি আমার কাজের সহযোগিতা করার জন্য মেয়ে কর্মী  নিয়োগ দেওয়ার। তাহলে হয়তো আমি আমার উদ্যোগটাকে আরও বেশি এগিয়ে নিতে পারব। তাছাড়া বর্তমানে আমি সোনালি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত। আমি চেষ্টা করছি আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের কিছু অংশকে সোনালির লয়্যালটি পার্টনার হিসেবে যুক্ত করতে।’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button