জেলার খবর

গাজীপুরে নির্মাণ হচ্ছে ঈশা খাঁর সমাধিস্তম্ভ

85599গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে ঈশা খাঁর সমাধিস্তম্ভ। বাংলার ইতিহাসের বারো ভূঁইয়া বা বারোজন জমিদারের মধ্যে অন্যতম বীর ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধিস্থল যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এ সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। উইকিপিডিয়া ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৪০০ বছরেরও আগে বারো ভুঁইয়া ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর তাকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর এলাকায় সমাহিত করা হয়। কালের পরিক্রমায় অযত্ন-অবহেলায় একসময় হারিয়ে যায় ঈশা খাঁর সমাধি চিহ্ন।

ইতিহাসে ঈশা খাঁর বীরত্ব, শাসন, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধর্মপরায়ণতা নিয়ে নানা কল্পকাহিনী রয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের কোথাও তার সমাধিস্থলের কথা উল্লেখ নেই। ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর এলাকায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুর্গে একটি প্রাচীন সমাধির সন্ধান পায়। পরে নানা তথ্য-উপাত্ত ও ইতিহাস বিশ্লেষণ শেষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিশ্চিত হয় যে সমাধিটি ঈশা খাঁর। পরে এলাকাবাসী বাঁশের বেড়া দিয়ে সমাধিটি সংরক্ষণে রাখে।  এরপর ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ঈশা খাঁর সমাধির চারপাশে ইটের দেয়াল তুলে দেন।

বাংলার ইতিহাসে বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী ১২জন জমিদারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বীর ঈশা খাঁ। তার রাজধানী ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও। মোগল শাসকদের সঙ্গে তার একাধিক যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধের জন্য তিনি এগারসিন্ধু ও বক্তারপুরে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। ১৫৯৯ সালে কালীগঞ্জের বক্তারপুর দুর্গে এসে ঈশা খাঁ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বক্তারপুর দুর্গে অবস্থান নিয়ে একজন প্রখ্যাত হেকিমের চিকিৎসা গ্রহণকালে ঈশা খাঁ ১৫৯৯ সালে ৭০ বছর বয়সে মারা যান। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী ঈশা খাঁকে সমাহিত করা হয় বক্তারপুর দুর্গের দিঘির পশ্চিম পাড়ে।

ঈশা-খাঁসহ বারো জন জমিদার একসঙ্গে বাংলায় স্বাধীনভাবে জমিদারী স্থাপন করে। ঈসা-খাঁর বাংলো বাড়ি কিশোরগঞ্জে অবস্থিত।  তিনি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার ওই সময়ের কুইচ রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলো বাড়ি নির্মাণ করেন।

১৫৭৫ সালে সম্রাট আকবর বাংলা বিজয়ের পর বারো ভূঁইয়াদের ক্ষমতা কমে যায়। তখন সম্রাট আকবর বারো ভূঁইয়াদের দমন করতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

ঈশা খাঁ ১৫২৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভাটি অঞ্চল শাহী বাংলায় মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সুলাইমান খাঁন। মুসা খাঁর বংশধর ছিলেন- ঈশা খাঁ। ন্যায়পরায়ণ শাসক ও বীরত্বের প্রতীক হয়ে তিনি ইতিহাসের পাতায় উঠে আসেন।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বক্তারপুরে ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধিস্তম্ভ নতুন করে নির্মিত হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ঈশা খাঁর বীরত্ব, শাসন, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধর্মপরায়ণতা তুলে ধরার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমাধিস্তম্ভটি সাড়ে ১৭ ফিট উচ্চতার এবং ২৪ ফিট প্রস্থের। লাল রংয়ের সিরামিক ইট দিয়ে ঈশা খাঁর সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ঈশা খাঁর বীরত্বের ইতিহাস এবং বাংলায় তার অবদান তুলে ধরা হবে। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর সমাধি সংরক্ষণ করতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। সমাধিটি প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর লাল সিরামিক ইটের সমাধিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button