নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো বড় উৎস সৌরবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ। এর বাইরে বাতাস, বায়োগ্যাস কিংবা বায়োম্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগানো যায়নি। তবে বায়োগ্যাস নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দেশের প্রতিটি জেলায় এক হাজার করে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের চাহিদার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে। যদিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যায়োগ্যাসের অবদান এখনো শূন্যের কোটায়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৬৪ জেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ‘যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর’। প্রতি জেলায় ১ হাজার করে মোট ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খামার স্থাপন করে মোট ১ লাখ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি (প্রতি খামারে ন্যূনতম দুজন) করা হবে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। রিভলভিং ক্রেডিট ফান্ড পরিচালনা করা হবে ১২৫ কোটি টাকার। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুবসম্পদে রূপান্তর করে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ হওয়ায় এটি অনুমোদন দেয়া হয়।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সব জেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে রান্নার জ্বালানি সংকট নিরসন হবে। পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়বে। এছাড়া এ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
দেশে উৎপাদিত জৈব পদার্থ পচনের ফলে বিভিন্ন যে গ্যাস পাওয়া যায় তার মিশ্রিত রূপ হলো বায়োগ্যাস। জৈব সার, পৌর বর্জ্য, নর্দমার আবর্জনা, খাদ্যবর্জ্যের কাঁচামাল থেকে বায়োগ্যাস উত্পন্ন হয়।
তবে বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন করে পরিকল্পনা করছে সরকার। যদিও দেশে এখন পর্যন্ত বর্জ্যভিত্তিক বায়োগ্যাসই সবচেয়ে সফল হয়েছে বলে ধরা হয়। দেশের বিভিন্ন উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। যে কারণে নতুন করে বায়োগ্যাস নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সরকারের নতুন এ উদ্যোগের বিষয়ে জানা গেছে, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক কর্মসূচি অনুযায়ী প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নাগরিক সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এতে পরিবেশের ইকোসিস্টেমের উন্নয়নের পাশাপাশি যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের ৪৯২টি উপজেলায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২০৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়ন হবে।
দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, দেশে প্রথম ১৯৭২ সালে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করা হয়। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৭৬ হাজার ৭৭১টি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকিং খাতের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) এ প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে। এর বাইরে বেশকিছু দেশী-বিদেশী সংস্থা এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছে।