পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে আঘাত হানার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ১১০টি বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৩০টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র ও পাঁচটি মুজিবকেল্লার উদ্বোধন এবং ৫০টি মুজিবকেল্লার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে যুক্ত হয়ে এটি উদ্বোধন করেন।
আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আবার সবাইকে সতর্ক করছি। আরেকটা ঘূর্ণিঝড় কিন্তু আসছে। সেটা কেবল তৈরি হচ্ছে। এখন আধুনিক প্রযুক্তির কারণে আমরা অনেক আগে থেকেই জানতে পারি। আর সে বিষয়ে সতর্কতা আমরা নিতে শুরু করেছি। ইনশা আল্লাহ আমরা সতর্ক থাকব, এ ঝুঁকি কমাতে পারব। যেকোনো দুর্যোগে ঝুঁকি হ্রাসের জন্য সবাই সচেতন থাকবেন, সতর্ক থাকবেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ একটা বদ্বীপ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রাকতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে মাঝেমধ্যেই মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও আসে। সবই মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আরো এগিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবেলার একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখে। এটা বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক বলে আমরা মনে করি। আমাদের দুর্যোগ মোকাবেলার যে সক্ষমতা সে সক্ষমতা আজকে সারা বিশ্বে সমাদৃত। যে কারণে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের এত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও একটা ছোট ভৌগোলিক সীমারেখায় বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সে কারণে আমাদের ওপর দায়িত্ব পড়েছে এখন সারা বিশ্বে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যেতে পারে তার পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন করা, মনিটরিং করার। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আসে। এটা নিয়ে কাজ করার জন্য গ্লোবাল অ্যাডাপটেশন সেন্টারের কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
করোনা ঠেকাতে সরকারের বিধিনিষেধের ফলে সৃষ্ট মানুষের কষ্টের বিষয় তুলে ধরে তা লাঘবের প্রচেষ্টার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা জানি কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি সেই কষ্টটা লাঘব করতে। তার পরও সবার সহযোগিতা চাই। আপনি নিজে শুধু সুরক্ষিত থাকছেন না, আপনারা আশপাশের পরিবারকেও সুরক্ষিত করছেন। এ কথা মনে রেখে আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।
আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় আসে তারা তো ঘুমিয়েই কাটাচ্ছিল। নিজেদের সম্পদ গড়তে ব্যস্ত ছিল। দেশের মানুষকে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি। সঠিক দিকনির্দেশনা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, আদর্শ নিয়ে চললে অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষকে কেউ কখনো দাবায়ে রাখতে পারবে না। আমরা সেভাবেই দেশকে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন বলেছিলাম কোনো কুঁড়েঘর থাকবে না, টিনের ঘর হলেও দেব—সেটা আমরা দিয়েছিলাম। এখন সেমিপাকা অথবা দুর্যোগ মোকাবেলায় সহনশীল ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে একটা জায়গা পেলে জীবন রক্ষা পায়।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকে আমরা ১২ বছর ক্ষমতায়। এর মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ অর্থাৎ যে কথাটা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঘোষণা দিয়েছিলাম রূপকল্প-২০২১, আমরা তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি এবং ঘর তৈরি করে দিয়েছি, যাতে কোনো মানুষ গৃহহারা না থাকে। এটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল, আমরা সেটাই বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি এবং করে যাচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ গৃহহারা থাকবে না।