বিদেশ
মিসরে বসন্ত
শীতের হাওয়ার নাচন থামতে না থামতে হাজার হাজার বছরের লালিত ফেরাউনিক ঐতিহ্য ঋতুরাজ ‘শাম এল-ন্যেসিম’ (বাতাসে সুগ্রান) উৎসব এসে হানা দিল মিসরের ঘরে ঘরে। প্রাচীন মিসরীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ২৭০০ সাল থেকে এই দিনে শাম-এল-ন্যেসিম উৎসব পালন করে আসছে। রাজধানী কায়রোয় অবস্থিত গিজা’র দি গ্রেট পিড়ামিডের সাথে সূর্য কিরণের পরিমাপ করে প্রতি বছর দিনটির সঠিক তারিখ নির্ধারণ হয়ে থাকে যা সাধারণত কপটিক অর্থোডক্সদের ইস্টার সানডের পর দিন সোমবার হয়ে থাকে। আজকের দিন এবং রাতের দৈর্ঘ্য সমান। উৎসবটি প্রাচীন মিসরীয়দের কৃষিক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত। শাম এল-ন্যেসিম নামটি প্রাচীন মিশরীয় ভাষা আফ্রাশিয়ান থেকে উদ্ভূত হয়ে কপটিক ভাষা থেকে এসেছে। যার মূল উচ্চারণটি হল তশোম নি তশম, যার অর্থ উদ্যানের চারণভূমি। এটি প্রতি বছর এপ্রিল মাসের মধ্যে কিংবা শেষ সোমবার হলেও এই বছর মে মাসের প্রথম সোমবার পালন করা হয়েছে। এই উৎসবের কোনও ধর্মীয় পটভূমি নেই। শাম এল-ন্যেসিম সাধারণত বসন্তের সূচনা করে ইস্টার পরে আসে।
এই দিনে সূর্য উঠার সাথে সাথে মিসরীয় পরিবার গুলো সবাই মিলে ফেশিখ / রিংগা মাছ ‘অনেকটা আমাদের লনা ইলিশ মাছের মত’ পিয়াজ পাতা, লেটুস ও সিদ্ধ ডিম নিয়ে নীল নদের পাড়, চিড়িয়াখানা কিংবা বিভিন্ন উদ্যানে চলে যায়। এই দিনে ছোট ছোট বাচ্চারা সিদ্ধ ডিমের ওপরে রঙিন অংকন করে থাকে ও পরে তা ভেংগে খায়। উদ্যান গুলোতে সারা দিন খেলাধুলা, আড্ডা ও সাথে নেওয়া শাম-এল-ন্যেসিমের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘লবণাক্ত মাছ’ পেঁয়াজ পাতা, লেটুস ও সিদ্ধ ডিম খেয়ে ঘরে ফিরে সন্ধ্যার পর।
যদিও গত কয়েক বছর যাবত মিসরীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ফাসিক ও রিংগা খেতে জনগনকে নিরুৎসাহিত করে আসছে। নোংরা পরিবেশে ফাসিক ও রিংগা তৈরী এবং প্রক্রিয়ারজাত করে বিক্রি করার পর প্রতি বছরেই শাম-এল-ন্যেসিমের পর কিছু মানুষ পেটের পিড়ায় ভুগে এবং কখনও কখনও মৃত্যু ঘটে । দিনটি সরকারি ছুটি হলেও এ বছর শ্রমিক দিবস, ইস্টার সানডে ও সাপ্তাহিক ছুটি এবং শাম-এল-ন্যেসিমে মিলে টানা পাঁচ দিন ছুটি কাটাল মিসরবাসী। মুসলিম ও খৃষ্টান ধর্মে বিশ্বাসী এবং সামাজিক অবস্থানের নির্বিশেষে সবাই উৎসবটি এক সাথে পালন করে । রমজানের পবিত্রতা রক্ষা ও করোনার ভাইরাসের প্রকোপে এ বছর দিনের বেলা খোলা জায়গায় শাম-এল-ন্যেসিম পালন করতে দেখা যায়নি গোটা মিসরে।