ভ্রমণ

আদু পাড়ায় একদিন

ভবঘুরের খেরোখাতা

258আমাদের সঙ্গে থাকা খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেছে, সঙ্গে আছে সবেধন নীলমণি একটা খিচুড়ি মিক্স। প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত, প্রায় ঘন্টা খানেক হাঁটার পর একটি জুম ঘর পেলাম। বুঝতে বাকি রইল না, আদু পাড়া আসতে বেশ বাকি আছে। কারন এই ধরনের জুমঘরগুলো পাড়া থেকে বেশ দুরে বানানো হয়ে থাকে ফসল উৎপাদনের সময় অবস্থান করে ফসলের পরিচর্যা করার জন্য। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জুম ঘরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া হবে।

জুম ঘর দেখে আমাদের প্রত্যেকের মডেল সত্বা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। শুরু হয়ে গেল বিভিন্ন পোজে ছবি উঠানো অল্পক্ষনের মধ্যেই সবার উৎসাহে ভাটা পরলো, আসলে কারোই শরীরে শক্তি অবশিষ্ট নেই। বাধ্য হয়ে শুরু করলাম বিশ্রাম নেওয়া। ক্ষুধা ও তৃষ্ণার কারনে বিশ্রাম নিয়েও ক্লান্তি যাচ্ছিলো না। বিশ্রাম শেষে ক্লান্ত শরীরে ব্যাগটা কে খুব বেশি বোঝা মনে হচ্ছিল কিন্তু কিছুই করার নেই, ব্যাগ কাধে আমরা নেমে পরলাম আদু পাড়ার পথে।

আদু পাড়ার ঠিক আগে একটি ছড়া পেয়ে গেলাম, এ যেন চৈত্রের গরমে কাঙ্খিত বৃষ্টির মতো। পালে মুরং এর বারন সত্বেও প্রচুর পানি খেয়ে নিলাম। পালে মুরং বারবার বলছিল খালি পেটে এত পানি খাবেন না, কে শোনে কার কথা। পানি খেয়ে, সঙ্গে থাকা বোতল গুলো ভরিয়ে নিয়ে একটা গোসল দিয়ে দিলাম। পানি পান করায় এবং শরীর ঠান্ডা পানির পরশ পাওয়ায় সব ক্লান্তি যেনো দুর হয়ে গেল। একটু উপরে উঠতেই আদু পারা, আমি যখন গোসল দিচ্ছিলাম সবাই একটু এগিয়ে পাড়ার মধ্যে ঢুকে পরে। আমি গোসল দিয়ে পাড়ায় ঢুকতেই দেখি পালে মুরং তেতুল গাছে উঠে পড়েছে, নিচে সবাই সেই টক তেঁতুল কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেয়ে যাচ্ছে, যেন কোন অমৃত। পাশের ঘর থেকে কিছু লবন চেয়ে নিয়ে আমিও যোগ দিলেন তাদের সাথে।
2358আদু পাড়া পেরিয়ে আমাদের গন্তব্য আদু পাড়ার নতুন অংশে। পরিবারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পাশের একটা পাহাড়ে কয়েকটা পরিবার ঘর তুলেছে, ৯-১০ মিনিটের পথ। এই রাস্তাটুকু হাটাও মনে হচ্ছিলো অনন্ত পদযাত্রা। শেষ পর্যস্ত দেখা মিললো সাত পরিবারের ছোট্ট গ্রাম নতুন আদু পাড়ার। পালে মুরং নিয়ে গেলো অং দার ঘরে।

বাশ দিয়ে তৈরী বেশ বড় একটা ঘড়, সামনে একটা বড় বারান্দা। আমরা বারান্দা পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম। বাহির থেকে ঘরটা যতটা বড় মনে হচ্ছিলো ভিতরে ঢুকে দেখি ঘরটা তার চেয়েও বড়। ঘরের এক পাশে রান্নার ব্যবস্থা আছে, রান্নার জিনিসপত্র খুব সুন্দর করে সাজানো। পাশেই বাশের তাকে সাজানো পানির অনেকগুলো পাত্র। একপাশে শোয়ার জিনিসপত্র রাখা আছে, অন্য পার্শে একটা কোমর তাতে কাপড় বুনছে এক নারী। ঘরের একটা পাশ ফাকা ছিলো। ঘরে প্রবেশ করে ফাকা অংশটায় পিঠের ব্যাগ বোঝা নামিয়ে রেখে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম। খালি পেটে প্রচুর পানি খাওয়ায় ক্ষুধাটা ততক্ষনে যন্ত্রনায় রুপ নিয়েছে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষন বিশ্রামের পর হাসান ভাই রান্না শুরু করলেন, আমি মনযোগ দিলাম ছবি তোলায় ও বাচ্চা গুলোর সাথে ভাব জমানোয়। মনে হয় খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না। যে দুই একটা কথা বের হচ্ছিলো ভাষাগত পার্থকের কারনে সব ছিলো আমার কাছে দুর্বোধ্যর চেয়ে একটু কঠিন।

আজ রান্নার মেনু পছন্দ করার কোন ব্যাপার ছিলো না। একটা মাত্র খিচুড়ি মিক্স অবশিষ্ট ছিলো, হাসান ভাই সেটিই উঠিয়ে দিলেন। ছোট বাচ্চাগুলো কখনো এমন অদ্ভুত রান্না দেখেনি তাই রান্নার পুরোটা সময় হাসান ভাইকে ঘিরে রাখলেন। একটা বাচ্চাতো খিচুড়ি মিক্সের প্যাকেটা নিয়েছে হাতছাড়া করবেই না, কাউকে ছুতেও দেবে না। রান্না শেষে সেই অল্প পরিমান খিচুড়ি বাচ্চা গুলোকে সংগে নিয়ে একটু একটু করে খেয়ে নিলাম। ক্ষুধা দুর হলেও পেটের যন্ত্রনাটা কিছুতেই দুর হচ্ছিলো না। আমাদের সংগে থাকা স্যালাইন শেষ হয়ে গেছে আগেই। সংগে থাকা ঔষধের প্যাকেট থেকে একটা এমোডিস খেয়ে নিলাম।

এদিকে খিচুরি খাওয়া শেষে তার থালায় পানি ঢেলে দেওয়ার অপরাধে এক পুচ্চি মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছোট যে বাচ্চাটা খিচুরির প্যাকেট নিয়েছিলো ওই বাচ্চাটা খাওয়া শেষ হবার অনেক্ষন পর পর্যন্ত থালা চেটে খাচ্ছিলো। বাচ্চাটার মা বার বার চাওয়ার পরও বাচ্চাটা থালা দিচ্ছিলো না। শেষে বাচ্চাটার মা থালায় পানি ঢেলে দেয়। থালাটা সে আরো মুছে খেতো, তাই রাগে, দুখেঃ হতাশায় সে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মা বেচারি কি করবে না করবে খুজে পাচ্ছে না।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button