হিরো অফ দি ডে

উন্নয়নের অংশীদার হবে লিনজার ‘চড়ুইঘর’

linzaএকজন মানুষ যদি ব্যবসায়ী হওয়ার প্রত্যয়ে মাঠে নামেন, প্রথমে খেয়ে-না খেয়ে পরিশ্রম করেন তিনি। একাই। কিন্তু যদি সফল হন, তাহলে ভোগ করে তার পুরো পরিবার। এমনকি পুরো দেশবাসীও। প্রশ্ন হলো—ক’জনই চান ব্যবসায়ের মতো চ্যালেঞ্জিং পেশাকে সঙ্গী করে আজীবন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে? আমাদের সমাজের বেশিরভাগ তরুণকে যদি প্রশ্ন করা হয় পড়ালেখা শেষে কী করবেন। নিশ্চয়ই তারা বলবেন, ‘ভালো চাকরি করতে চাই। ’ তবে এর ব্যতিক্রমও আছে।  তারা চাকরি নিতে চান না,  দিতে চান। আজ এমনই একজন সফল ব্যবসায়ীর কথা বলবো, যিনি করোনার মতো মহামারির কাছে শিখেছেন—কিভাবে জীবনে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। কিভাবে নিজের আর্থিক উন্নয়নসহ দেশের উন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া যায়।  বলছি, রংপুরের ইসরাত জাহান লিনজার কথা।

ইসরাতের জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুরে।  বাবা মনজুরুল হক লিটন একজন ব্যবসায়ী, মা লুৎফা বেগম রিনা গৃহিণী।  দুই ভাই-বোনের মধ্যে লিনজা বড়। স্নাতকে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় লিনজার।  পরে স্বামীর অনুপ্রেরণায় স্নাতক শেষ করেন তিনি। বর্তমানে পড়ালেখার পাশাপাশি অনলাইনে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলছেন লিনজা।  ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল—এমন কিছু করবেন, যেটা অনেক মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হবে।

লিনজা বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দেশ যখন লকডাউনে, তখনই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান উইয়ের (ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ) হাত ধরে আমি ব্যবসায়ী জীবন শুরু করি। শুরুর দিকে সব কিছুই অনেক কঠিন থাকে।  শুরুতে আমার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন ছিল। কারণ করোনা, তার ওপর লকডাউন ছিল। এরচেয়েও কঠিন সত্য হলো, শুরুটা একা করেছিলাম। ’

এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘তখন অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ পাওয়া এমন সহজ ছিল না।   বিষয়টি যাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি, তারা বলেছেন, করোনা শেষ হোক, এখন মানুষ বাঁচবে কি না, তার ঠিক নেই, আর এখন তুমি অনলাইনে বিজনেস শুরু করবে! যদি বেঁচে থাকো, তারপর শুরু করো। সত্যি কথা বলতে কী, শুরুতে আমার স্বামীও সাপোর্ট করেননি। তবে এখন সাপোর্ট করেন। তাই যা কিছু করেছি, তা নিজের বুদ্ধি থেকেই করেছি।  পেছন থেকে টেনে ধরার মানুষ অনেক ছিল।  মূলত যারা অভিজ্ঞ, তাদের কাছে সহযোগিতা আশা করেছিলাম।  কিন্তু তারা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে টেনে ধরেছেন। এজন্যই হয়তো কিছুটা এগিয়ে আসতে পেরেছি। আমার অনেক টাকা ছিল না।  ইচ্ছা ছিল, যাই করি না কেন, নিজের টাকায় করবো। তাই, নিজের জমানো মাত্র ৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে উদ্যোগ শুরু করি। তবে, আমার যা  ছিল, তা হলো যোগ্যতা। কাজ করার চেষ্টা ও আগ্রহ। ’

লিনজা বলেন, ‘‘বর্তমানে কাজ করছি নারীদের পোশাক নিয়ে। যার মধ্য রয়েছে ঢাকাইয়া জামদানি শাড়ি, থ্রি-পিস ও টাঙ্গাইলের শাড়িসহ কিছু পণ্য নিয়ে। গ্রাহকের অর্ডারও নিচ্ছি।  বর্তমান ‘উই’তে আমার পণ্যের মোট বিক্রি করা অর্থ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯৫  টাকা।  ‘উই’তে আমি ১১ মাস অ্যাকটিভ ছিলাম সেলের কথা চিন্তা না করে। ‘উই’ থেকে সবার অনেক সাপোর্ট পেয়েছি।  এর হাত ধরে অনেক জেলায় আমার প্রোডাক্ট পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। অনেক জেলায় অনেকবার গিয়েছে আমার প্রোডাক্ট, রিপিট কাস্টমারও পেয়েছি। আবার প্রবাসী কাস্টমারও পেয়েছি। ’

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার নিজস্ব একটি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য ফেসবুক পেজ রয়েছে, নাম (Churoighor)।  এখানেও অনেক পণ্য বিক্রি করেছি, করছি।  আপাতত পরিবার আমাকে সাপোর্ট করছে, আশা করছি, ধীরে ধীরে সহযোগী হিসেবে কর্মীও নেবো। ’’

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বপ্ন সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসায় ভর করে চড়ুইঘর ‘Churoighor’-এর পণ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক।  এইটাই আমার চাওয়ায়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দু’জন মানুষের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তারা হলেন শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার ও নাসিমা আক্তার নিশা আপা। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই নারীরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের হাল ধরতে পেয়েছি।  নিজের ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারছি।  বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও পজিটিভ বাংলাদেশ গড়তে নারী-পুরুষ কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে, এটাই প্রত্যয়।’’

এমন আরো সংবাদ

Back to top button