রাজধানীর জলাশয়গুলোকে আবর্জনামুক্ত করতে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য অপসারণ বিভাগ। এ কর্মসূচির আওতায় আড়াই মাসে রাজধানীর তিনটি খাল, দুটি কালভার্টের পিট ও একটি স্লুইস গেট থেকে অপসারণ করা হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার টন বর্জ্য। শ্যামপুর, জিরানি ও মান্ডা খাল; পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট এবং কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের স্লুইস গেট থেকে এসব বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
মেগাসিটি ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে চলতি বছরের শুরুতে এ খাল ও কালভার্ট পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। তিন মাসের এ ক্রাশ প্রোগ্রামের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। অভিযানের প্রথম আড়াই মাসে কাজ এগিয়েছে ৯০ শতাংশ। ব্যয় হয়েছে ১২০ কোটি টাকা। এ সময়ে ছয়টি স্থান থেকে অপসারিত বর্জ্যের ৪৩ শতাংশই জিরানি খালের। খালটি থেকে অপসারিত বর্জ্যের পরিমাণ প্রায় ৩৫ হাজার টন।
ডিএসসিসির তথ্য মতে, আড়াই মাসে এসব খাল, কালভার্ট ও স্লুইস গেট থেকে মোট ৮১ হাজার ৯৭৫ টন বর্জ্য ও ৪ লাখ ৭৫ হাজার টন পলি অপসারণ করা হয়েছে। অভিযানের পর খালগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরে আসছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তারা বলছেন, এ অভিযানের ফলে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি না মিললেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে।
খাল পরিষ্কার অভিযানের অভিজ্ঞতা জানিয়ে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, গত আড়াই মাসে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছে। সকালে বর্জ্য পরিষ্কার করেছি। বিকালেই আবার মানুষ সে খালে ময়লা ফেলেছে। জাজিম-তোশক থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরনের ময়লাই পরিষ্কার অভিযানে পাওয়া গিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আড়াই মাসে আমরা ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি।
ডিএসসিসি জানিয়েছে, ক্রাশ প্রোগ্রামে শ্যামপুর খাল থেকে ১৪ হাজার ৭৮৩ টন, জিরানি খাল থেকে ৩৫ হাজার ২২৪ ও মান্ডা খাল থেকে ২৭ হাজার ৮০৪ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। খালগুলো থেকে অপসারিত বর্জ্যের একটি বড় অংশ হলো পলি। এ তিন খাল থেকে যথাক্রমে ৮৭ হাজার, ৫৩ হাজার ও ৮৫ হাজার টন পলি অপসারিত হয়েছে। স্লুইস গেটের ৫১টি পিট থেকে অপসারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার টন পলি।
এছাড়া পান্থপথ বক্স কালভার্টের ২৯টি পিট থেকে ২ হাজার ১২৬ টন বর্জ্য অপসারণ হয়েছে। সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের ৫১টি পিট থেকে ২ হাজার ৩৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়।
অভিযান সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকাবাসীকে জলজট থেকে মুক্ত করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আশা করছি আসছে বর্ষা মৌসুমেই এ খাল পরিষ্কার অভিযানের সুফল পাওয়া যাবে।
তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, প্রতি বছর শতকোটি টাকা খরচ করে খাল উদ্ধার বা বর্জ্য অপসারণের কোনো সুফল কখনো জনগণ পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে—এমন নিশ্চয়তা নেই। সত্যিকারের সুফল পেতে চাইলে খাল পরিষ্কার তো রাখতে হবেই। পাশাপাশি এটি যাতে আবার নোংরা না হয়, সে পরিকল্পনাও করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, পরিষ্কার অভিযানের পরদিনই খাল নোংরা করা হচ্ছে। এমন পরিষ্কার অভিযানের ফল কী? সে কারণে খাল পরিষ্কারের জন্য সমন্বিত কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
ইকবাল হাবিব বলেন, খাল যাতে আর কেউ নোংরা না করে, তা নিশ্চিতের জন্য বর্জ্য ফেলার বিকল্প জায়গা নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাছাড়া মানুষের পয়োবর্জ্য যেন খালে না যায়, তা-ও ওয়াসাকে নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াসা এখনো এ বিষয়ে ৫০ শতাংশও সফল হতে পারেনি। এসব খাল তো মানুষই নষ্ট করেছে। এক-দুটো লিফলেট ছাপিয়ে, মাইকিং করে জনসচেতনতা বাড়ানো যায় না। জনসচেতনতার জন্য সিটি করপোরেশনকে আলাদা পরিকল্পনা, বাজেট ও ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে।