
ম্যানিয়্যাং পাড়া, আলীকদম, বান্দরবান: কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ায় আলসেমি কাজ করছিলো খুব। ল্যাং মুরং এর চাপাচাপিতে হাত মুখ ধুতে বের হলাম। ছরার রাস্তার মাথায় এসে আমরা থেমে গেলাম সকলে, এর জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ম্যানিয়াং পাড়ায় আমরা এ্যাটাচড বাথরুম আশা করিনি ঠিকই কিন্তু হাত মুখ ধোয়ার জন্য ৮০-৯০ ফিট নিচে নামার জন্য আমরা কেউই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। যাই হোক, বাধ্য হয়ে শুরু করলাম আবার নিচে নামা। নিচে যে আমাদের জন্য আরেকটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল তা কে জানতো! টিনের চালা দেওয়া লম্বা একটা পাথরের গর্তে পানি জমানো আছে, আশপাশে কোন ঝর্ণা বা ছরাও নেই, কোনো দিক থেকে পানি আসার কোন চিহ্নও নেই। পানির উৎস জানতে চাইলে ল্যাং দা বলল পাহাড়ের ভিতর থেকে পানি আসছে। কিছুই মাথায় না ঢুকলেও শীতল পানির পরশে আমাদের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল, তারপর আবারও সামিট করতে হলো ম্যানিয়াং পাড়ায়।

ছরা থেকে ফিরেই আমরা বসলাম রাতের খাবার রান্নার জন্য। হাড়ি পাতিল বের করে রান্নার আয়োজন আরম্ভ করলেন হেড কুক রন্ধনরাজ হাসান ভাই। ম্যানিয়াং দা ও বৌদি খড়ি এনে চুলা জ্বালিয়ে আমাদের সাহায্য করলেন। দেখে বোঝার উপায় নেই যে আমরা যে বিনা নোটিশে মাঝ রাতে উদয় হয়ে ঘাড়ের উপর চেপে বসেছি। এতোটাই আন্তরিক যেন মনে হচ্ছে কত দিনের চেনা। আমাদের সঙ্গে বেশ কিছু শুকনো খাবার ও উপকরণ আছে, রেডি খিচুড়ি মিক্স , আলু, স্যুপ, নুডুলস, পেঁয়াজ, মরিচ, তেল সবই আছে। আমরা চাল ও তরকারি বহন করিনি পাড়া থেকে সংগ্রহ করবো বলে। আর জুমের চালের রান্না করা ভাতের টেস্টই আলাদা। সারাদিন ভাত পেটে পরেনি, ম্যানিয়াং দার ঘর থেকে দেড় কেজি চাল কিনলাম, চাল কুমড়া বা মিষ্টি কুমড়া পাওয়া যায় কিনা খোঁজ করলাম কিন্তু পেলাম না। আমাদের সঙ্গে থাকা আলু দিয়ে আলু ভর্তা করা হবে, আর ডাল রান্না করা হবে স্যুপ দিয়ে।
হেড কুক হাসান ভাইকে রান্নার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সাহায্য করছেন উসাই মারমা, সে আবার কাটাকাটিতে খুবই দক্ষ। আর সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন কিরন ভাই। ল্যাং মুরং আলু সিদ্ধ করলেন। এদিকে উসাই যখন আলু ভর্তা করা শুরু করেছে, তখন দেখা গেলো আলু পুরোপুরি সিদ্ধ হয়নি। কিন্তু আমাদের পেটে তো ছুঁচো দৌড়াচ্ছে, অপেক্ষা না করে অর্ধ সিদ্ধ আলু ভর্তা দিয়ে শুরু হয়ে গেল আমাদের রাতের খানা। আলু ভর্তায় লবণ বেশি হয়েছে না কম হয়েছে, সিদ্ধ হয়েছে কি না, সুপের ডাল আদৌ খাবার যোগ্য হয়েছে কিনা এসব নিয়ে প্রশ্ন করার বা ভাবার সময় কারো ছিল না। জুমের চালের ভাত, অর্ধ সিদ্ধ আলু ভর্তা আর টক টক স্বাদের সুপের ডাল দিয়ে আমরা পরম তৃপ্তি সহকারে রাতের খানা খেলাম। (চলবে)