দেশহাইলাইটস

টিকা: এসএমএস জটিলতা নিয়ে যা বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

ekকরোনাভাইরাস প্রতিরোধে সারাদেশেই টিকা কার্যক্রম চলছে শ্লথ গতিতে। গত তিনদিন যাবৎ প্রায় একই অঙ্কে ঘুরছে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিষয়টিকে পুরোপুরি ‘কাকতালীয়’ ঘটনা বলা হলেও টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে না ভিন্ন নানা কারণে। নিবন্ধন সম্পন্ন করেও অনেকের অভিযোগ, এসএমএস না পাওয়ায় অনেক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, নিবন্ধন যেহেতু হয়েছে, সেখানে টিকা অবশ্যই দেওয়া হবে। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিকা নিতে আসা একজন জানান, তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি টিকা নিতে স্বামী-স্ত্রী নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু তারা কেউ এসএমএস পাননি। এই জটিলতায় তিনি ঘুরছেন এ ডেস্ক থেকে সে ডেস্কে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কী এক ঝামেলাতে পড়লাম, এখানে আসার পর কেউ কোনো জবাব দিতে পারছে না, কেবল এখান থেকে সেখানে ঘোরাচ্ছে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, যারা এ পর্যন্ত টিকার নিবন্ধন করেছেন, তাদের সবাইকে তো একদিনে টিকা দেওয়া যাবে না। রেজিস্ট্রেশন যেহেতু হয়েছে, সেখানে টিকা অবশ্যই দেওয়া হবে। হয়তো আজ হচ্ছে না, কাল হবে, নয়তো পরশু, অথবা তার পরের দিন। ডেট পাননি মানেই যে কেউ ডেট পাবেন না-বিষয়টি তা নয়।

অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘একটা টিকা কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগের সক্ষমতা যতটুকু, সেখান থেকে ঠিক ততোজনকেই এসএমএস দেওয়া হচ্ছে। যে বলছে এসএমএস পাচ্ছে না, সে এটার বাইরে আছে। সে হয়তো আজ না পেলে কাল পাবে, নয়তো পরশু পাবে। এটা কোন সমস্যা না। টিকা নেওয়ার সময় হলে পর্যায়ক্রমে সবাই এসএমএস পাবে।’

টিকা গ্রহীতার সংখ্যা না বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে করোনা থেকে ‘আল্লাহই বাঁচাবে’,টিকা নেওয়ার কোনো দরকার নেই। ফলে টিকা নিতেও আসছে না। কেউ আসতে না চাইলে তাদের আমরা কী করতে পারি? তবে আশা করছি এগুলো ধীরে ধীরে কমে যাবে। টিকা গ্রহীতার সংখ্যাও বেড়ে যাবে।’

নিবন্ধন বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গতকাল পর্যন্ত ২৫ লাখের মতো নিবন্ধন হয়েছে। মানুষও স্বেচ্ছায় এসে নিবন্ধন করছে। তবে, নিন্মশ্রেণী থেকে ওরকম সাড়া এখনও পাচ্ছি না।’

টিকা গ্রহীতাদের এসএমএস জটিলতা প্রসঙ্গে গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, একটি কেন্দ্রে যতগুলো লোককে একদিনে টিকা দেওয়া যাবে, সেই প্রোগ্রাম অনুযায়ী এসএমএস যাবে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব বাংলাদেশে নাই, ভবিষ্যতেও হবে না।

টিকা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বুধবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে নারী-পুরুষ মিলিয়ে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন। পরবর্তী দিনও (১৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে টিকা গ্রহণ করেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৯০৩ জন। এমনকি বুধবার দুই লাখ ২৬ হাজারের অঙ্কে রয়েছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা। এদিন সারাদেশে টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও দেখা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন আরও দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন। এনিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী মোট টিকা নিয়েছেন ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন। নতুন ২০ জনসহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৫১০ জনের।

বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি এবং ময়মনসিংহ বিভাগের মানুষ সবচেয়ে কম টিকা নিয়েছেন। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ৮৭০ জন, যার মধ্যে সর্বোচ্চ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন দুই হাজার ৯০০ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে করোনার টিকা নিয়েছেন ৭০ হাজার ২৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪৫ হাজার ৫৭৮ এবং নারী ২৪ হাজার ৪৪৭ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ১৪ জনের। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এ বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট চার লাখ ৪৫ হাজার ৪৬৯ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে ১২৪ জনের।

ময়মনসিংহ বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ৭৭৩ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ছয় হাজার ৭০৯ এবং নারী চার হাজার ৬৪ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে চারজনের। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ বিভাগে ৭১ হাজার ৩৭৫ জন টিকা নিয়েছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৩৩ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৮৩ জন মানুষ। এর মধ্যে পুরুষ ২৯ হাজার ২৫২, নারী ১৫ হাজার ৫৩১ জন। তাদের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন মোট তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ১২৫ জনের।

রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ২৭ হাজার ১০৮ জন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৯০০ জন পুরুষ এবং ১০ হাজার ২০৮ জন নারী। তাদের কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। সবমিলিয়ে এ বিভাগে মোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৮০ হাজার ৭৯১ জন, এর মধ্যে মোট ৪৫ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে।

রংপুর বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১৯ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৫২৮ এবং নারী সাত হাজার ২৩১ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। এ বিভাগে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে সর্বমোট এক লাখ ৪৭ হাজার ২০৪ জন টিকা নিয়েছেন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৫৯ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭ হাজার ৯৩২ জন পুরুষ ও ১০ হাজার ৫০৪ জন নারীসহ মোট ২৮ হাজার ৪৩৬ জন মানুষ টিকা নিয়েছেন খুলনা বিভাগে। টিকা নেওয়ার পর দুজনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে এ জেলায় মোট এক লাখ ৮১ হাজার ৬২১ জন টিকা নিয়েছেন, এর মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৭৬ জনের।

বরিশাল বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১৩ হাজার ১৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ আট হাজার ৪৮৪ এবং নারী চার হাজার ৬৬২ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এ বিভাগে সর্বমোট টিকা নিয়েছেন ৭৬ হাজার ৮০৫ জন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ২৪ জনের।

সিলেট বিভাগের গত ২৪ ঘণ্টায় টিকা নিয়েছেন ১২ হাজার ৭২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ সাত হাজার ৮২০ জন এবং নারী চার হাজার ৯০৫ জন। কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এ বিভাগে এখন পর্যন্ত সর্বমোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ ১৮ হাজার ৩৬১ জন, মোট ২৪ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button