জেলার খবরহাইলাইটস

করোনায় দেশে ফিরে কৃষিতে ঘুরে দাঁড়ালেন এক প্রবাসী

coronaকরোনায় কর্ম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আকামা হারিয়ে দেশে পৈত্রিক সম্পত্তিতে বহুমাত্রিক কৃষি শাক-সবজি উৎপাদন করে ঘুরে দাঁড়ালেন কুয়েত প্রবাসী মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। গেল বছরের শুরুর দিকে ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের এ কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী দেশে ফেরেন। তিনি পারিবারিক কাজে কুয়েতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে স্বল্প ছুটিতে দেশে যান। পরে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে কুয়েতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। করোনা শনাক্ত হওয়ায় এর বিস্তার রোধে দেশটির সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের খবর শুনে ফিরতি টিকেটের তারিখ পরিবর্তন করেন এ প্রবাসী।

৭ মার্চ ২০২০। চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েতগামী বিমানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। চোখেমুখে কঠিন আতঙ্কের ছাপ, আদৌ কি কুয়েতে পৌঁছতে পারবেন? কারণ ততক্ষণে গোটা পৃথিবী করোনা নামক এক বৈশ্বিক মহামারির দিকে ধাবিত হচ্ছে। পুরো বিশ্ব জীবিকা ফেলে জীবন বাঁচাতে ছুটছে। একের পর এক বিভিন্ন দেশ লকডাউন ঘোষণা করছে। বাতিল হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সব সিডিউল। এমন অবস্থায় কর্মস্থলে ফিরতে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে জিন্নাহ। ঠিক তখনই বিমানবন্দরে খবর এলো কুয়েত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।

একদিকে কুয়েতে অর্ধ কোটি টাকার ব্যবসা অন্যদিকে হাতে যা টাকা পয়সা ছিল তাও শেষ। ৩৩ বছরের সব সঞ্চয় দিয়ে গড়া ব্যবসা-বাণিজ্য কুয়েতে রেখে এসেছেন জিন্নাহ। ভেবেছিলেন কিছুদিন পরই আবার ফিরবেন। কিন্তু হঠাৎ কী থেকে কী হয়ে গেল। সময়ের ব্যবধানে সব যেন ফিকে হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশা হারিয়ে ফিরে যান চট্টগ্রামের বাসায় পরিবারের কাছে। তিনি শুধু কুয়েতের একজন ব্যবসায়ীই নন, সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির একজন নেতাও। তিনি কুয়েতের ফেনী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

করোনার পরিস্থিতির মধ্যে দেশে অবস্থানকালেই আকামার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় জিন্নাহর। বৈধতা হারান কুয়েতে প্রবেশের। তবে থেমে যাননি আত্মবিশ্বাসী এ প্রবাসী। নিজ গ্রামের বাড়িতে প্রাথমিকভাবে পৈত্রিক ও কেনা ৪৫ শতক পতিত জমিতে বহুমাত্রিক কৃষি উৎপাদন শুরু করেন তিনি। জিন্নাহকে এভাবে দেখে অভ্যস্ত নয় এলাকার লোকজন। শুরুতে অনেকেই তার এ কর্মকাণ্ডকে নিছক পাগলামি ও ছেলেখেলা মনে করেছিলেন। কিন্তু সাত মাসের কঠোর পরিশ্রমে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি এখন ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। ৪৫ শতক ভূমির বহুমাত্রিক ব্যবহার করে কৃষি এবং মৎস্য উৎপাদন করে এলাকার মানুষের মাঝে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠেছেন দৃষ্টান্ত। তার পুকুরে বিভিন্ন প্রকারের মাছের চাষ এবং পুকুরপাড়ে ও পতিত জমিতে পেঁপে, শসা, কুমড়ো, আলু, পুঁইশাক, তিতা, করলা, বেগুন, জালি কুমড়া, লালশাক, মুলা শাক, ধনিয়া, মরিচসহ বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল শাকসবজির আবাদ করছেন।

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও নিজে ইন্টারনেট থেকে পাওয়া জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জমিতে পুকুর কেটেছেন ও পুকুরপাড়ে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন মৎস্য চাষ ও কৃষিতে। গত ৯ মাসে কৃষিপণ্যের উৎপাদন দেখে তিনি বিস্মিত। কৃষিতে এখন  দারুণ সম্ভাবনা দেখছেন এ প্রবাসী। কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে আগামীতে এ উদ্যোগকে আরও সম্প্রসারিত করবেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

এমন আরো সংবাদ

Back to top button